উত্তরবঙ্গ – উত্তরবঙ্গে অতিবৃষ্টির জেরে ব্যাপক ধস ও বন্যার মধ্যে মিরিকের লোহার সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। বিরোধী দলগুলির দাবি, সেতু ভেঙে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও তাঁর এক্স (X) বার্তায় সেই দাবি উল্লেখ করেন। তবে সোমবার উত্তরবঙ্গের দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন, মিরিক সেতু ভেঙে কেউ মারা যাননি; মৃত্যুগুলি হয়েছে ধস ও বন্যার কারণে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনারা যা শুনেছেন তা সত্য নয়। কেউ ভুল তথ্য দিয়েছেন। সেতু ভাঙার ফলে কোনও প্রাণহানি ঘটেনি।” তিনি জানান, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত সেতুগুলি দ্রুত মেরামত করা হবে। মিরিকের মূল সেতুটি পুনর্নির্মাণ করতে প্রায় এক বছর সময় লাগবে, তবে আপাতত একটি অস্থায়ী সেতু তৈরি করা হচ্ছে, যা নির্মাণে প্রায় ২০ দিন সময় লাগবে। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মিরিক পরিদর্শনে যাবেন বলেও জানান তিনি।
সেতু ভাঙন প্রসঙ্গের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী আবারও ইন্দো-ভুটান নদী কমিশন গঠনের দাবি তোলেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ইতিমধ্যেই চিঠি পাঠানো হয়েছে, কিন্তু কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। মমতার বক্তব্য, “ইন্দো-ভুটান নদী কমিশন না হলে উত্তরবঙ্গকে এর ফল ভুগতে হবে।” তাঁর মতে, ভুটানের ৫৬টি নদী এবং সিকিমের ৪০টি বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ছাড়া জল সরাসরি উত্তরবঙ্গে প্রবাহিত হয়, যা প্রায়শই মারাত্মক বন্যার সৃষ্টি করে।
মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের উদাসীনতাকেও বন্যা পরিস্থিতির অন্যতম কারণ হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি অভিযোগ করেন, “ডিভিসির জলছাড়া দক্ষিণবঙ্গ ভেসে যায়, আর নেপাল-ভুটান-সিকিমের জল আসে উত্তরবঙ্গে। কিন্তু কেন্দ্র কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।” ফরাক্কা বাঁধ নিয়মিত খনন না করার অভিযোগও তোলেন তিনি।
কেন্দ্রের বঞ্চনার প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেন্দ্র আমাদের বন্যা ব্যবস্থাপনার জন্য কোনও অর্থ দেয় না। এমনকি গঙ্গা পরিষ্কারের গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানও বন্ধ করে দিয়েছে। এটা বাংলার প্রতি স্পষ্ট বঞ্চনা।”
উত্তরবঙ্গের বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পুনর্গঠন ও ত্রাণকাজে সর্বোচ্চ তৎপরতা চালানোর আশ্বাস দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “আমরা রাজনীতি নয়, মানুষের পাশে দাঁড়াতে এসেছি।”
