মৃত রেলকর্মীর ধরহীন মাথা উদ্ধার, গ্রেফতার ২। জগাছার বাসিন্দা সুরেশ সাউ হত্যাকান্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে দুই জনকে গ্রেফতার করে এই ঘটনার তদন্তকারী অধিকারিকরা। তাঁদেরকে জেরা করে মৃত সুরেশের ধরহীন মাথা উদ্ধার করে জগাছা থানার পুলিশ।
হাওড়ার নিবরা এলাকা থেকে উদ্ধার হয় মৃত সুরেশের মাথা। দশমীর দিন সুরেশকে হত্যা করা হয়, তাঁর মাথাহীন দেহ উদ্ধার হয় সলপ এলাকার নিবরার একটি চায়ের দোকানের পিছনের পরিত্যক্ত জমি থেকে। মৃতদেহ উদ্ধারের দিনে মৃত সুরেশের পরিচয় প্রথমে জানা না গেলেও পরে জানা যায় ওই ব্যক্তির নাম সুরেশ সাউ (৪৫ )। তিনি জগাছার সুন্দর পাড়ার বাসিন্দা।
সাঁতরাগাছি রেল ইয়ার্ডে কর্মরত ছিল সে। মৃতের পোশাক থেকেও কোনও পরিচয় পত্র উদ্ধার হয় নি। তবে, প্রাথমিক তদন্তে তদন্তকারী অধিকারিকদের অনুমান অন্যত্র খুন করেই বস্তাবন্দী করে সুরেশের মাথাহীন মৃতদেহ এখানে নির্জন স্থানে ফেলে রেখে গেছে দুষ্কৃতীরা। যদিও বিজয়া দশমীর দিনে এভাবে বস্তাবন্দী মৃতদেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায় গোটা এলাকায়। জগাছাতে সে একভাবে না থাকলেও তার স্ত্রী এই এলাকার বহুদিনের বাসিন্দা।
সে কিছুদিন আগে এখানে বসবাস করতে শুরু করে। কয়েকদিন ধরেই তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। জগাছা থানাতে নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ জমা করা হয় তার পরিবারের তরফ থেকে। ঘটনার সময় তার স্ত্রী ও সন্তান দেশের বাড়িতে ছিল বলে জানান তিনি। যদিও কি কারণে খুন সেই বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেনি তদন্তকারী আধিকারিকরা। পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, মৃত সুরেশের স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল মিঠুর। পাশাপাশি সুরেশের দু’টি বাস দেখাশোনার দায়িত্বে ছিল এই মিঠু।
মূলত সুরেশকে হত্যা করে দু’জনের মাঝখান থেকে সরিয়ে ফেলার চক্রান্ত করে মিঠু। এই কাজে সে সুরেশের শ্যালিকার ছেলে শেখরকেও যুক্ত করে। এই খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুরেশের পরিবারের লোকেদের সঙ্গেও এই বিষয়ে কথা বলে জানার চেষ্টা করে তদন্তকারী অধিকারিকরা। সেখান থেকেই তাঁরা সুরেশ হত্যাকান্ডের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। এরপরই এই হত্যকান্ডের কিনারা করতে মিঠু ও শেখরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
জেরার মুখে দু’জনেই সুরেশকে খুন করার কথা স্বীকার করে নেয়। মূলত সুরেশের সম্পত্তি হাতানোর উদ্দেশ্যেই এই খুন বলে পুলিশি তদন্তে উঠে আসে। যদিও পুলিশের অনুমান সুরেশের শ্যালিকা ও তাঁর স্ত্রীও এই কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। তাই তাদেরকেও শনিবার আটক করে থানাতে নিয়ে আসে জগাছা থানার পুলিশ। তাঁদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই কাণ্ডে তাঁদের ভূমিকা কতটা তা জানার চেষ্টা করছে তদন্তকারী আধিকারিকরা। যদিও আটক স্ত্রীর অভিযোগ, তার বোনের মেয়েকে ধর্ষণ করে তাঁর স্বামী।
আরও পড়ুন – ঐতিহ্যবাহী উল্কা ক্লাবের দুর্গাপূজা উপলক্ষে মেলা ও আদিবাসী নৃত্য প্রতিযোগিতা
সেই ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই শালীর ছেলেকে নিয়ে ছক কষে স্বামীকে খুন করায় স্ত্রী রামেস্বরী সাউ। সেই পরিকল্পনার অঙ্গ হিসাবেই স্বামীর দেহ থেকে মাথা আলাদা করে দেহ এক জায়গায় মাথা অন্য জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়। যদিও স্ত্রীর দাবিকে যাচাই করে দেখা হবে বলে জানা যাচ্ছে পুলিশ সূত্রে। ঘটনার তদন্তে নেমে জাগাছা থানার পুলিশ ইতিমধ্যেই আটক করেছে শেখার সাউ ও শেখরের সঙ্গী মিঠুনকে। মিঠুন মৃত সুরেশের একটি বাস দেখাশোনা করতো।
গত ৫ তারিখ ডোমজুর ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে সুরেশের মাথাহীন দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পাশাপাশি মৃতের পরিবারের সঙ্গে পুরানো শত্রুতার জেরে এই খুন কিনা তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সম্ভাব্য সমস্তদিক বিবেচনা করেই তদন্ত করতে শুরু করে তদন্তকারী আধিকারিকরা। প্রসঙ্গত, দশমীর বিকেলে হাওড়ার সলপ অঞ্চলের মল্লিক পাড়ার লালবাড়ি এলাকা থেকে সুরেশ সাউ-এর বস্তাবন্দী মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।