সুন্দরবনের মৈপীঠে বাঘ আতঙ্ক, খাঁচায় দেওয়া হল ছাগল, ঘুমপাড়ানি গুলি তৈরি। পর পর বাঘের পায়ের ছাপে গ্রামে আতঙ্কর পর এবার মৈপীঠের লোকালয়ে হানা দিল সুন্দরবনের রাজা। ধানক্ষেতে লুকিয়ে আছে মহারাজ তার রাজকীয় ভঙ্গিতে। বাঘ ধরতে সব আয়োজন প্রস্তুত বনদপ্তরের। বাঘের আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়েছে গুড়গুড়িয়া-ভুবনেশ্বরী পঞ্চায়েতের ভুবনেশ্বরী চারশো বিঘা, নস্কর ঘেরি এলাকার গ্রামবাসীদের। আশপাশের এলাকার মানুষজন মঙ্গলবার সকাল থেকেই ভিড় করেছেন্ন একবার বাঘের দর্শন পেতে।
কেউ উঠেছেন গাছে কেউবা রাস্তায়। সবার হাতেই মোবাইল। সকালে এলাকায় যায় দক্ষিন ২৪ পরগনা বন বিভাগীয় অতিরিক্ত আধিকারিক অনুরাগ চৌধুরী সহ রায়দিঘি, নলগড়া, চিতুরি বিট ও রেঞ্জার অফিসার সহ বন দপ্তরের কর্মীরা। আনা হল দুটি খাঁচা। ধানক্ষেত প্রায় ১০০ মিটার নেট দিয়ে ঘিরে ফেলেন বনদপ্তরের কর্মীরা।
এদিন সকাল ৬-৩০ নাগাদ চারশো বিঘা এলাকার বাসিন্দা মানস কুমার জানা, নস্কর ঘেরির বাসিন্দা প্রফুল্ল ভক্ত গ্রামের ইটের রাস্তার পাশে ধান ক্ষেতের পাশে জমিতে লকেট কড়াই তুলতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, সবে কড়াই তুলতে গিয়েছি দেখি ধানের শীষ নড়ছে। সরাতেই দেখি দিব্যি মহারাজের মত বসে বসে আছে বাঘ। ডেরাকাটা দাগ। গর্জনও করছে রীতিমত। আতঙ্কে গা শিউরে উঠে।
সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসে লোকজন কে ডাকি। তার চিৎকারে লোকজন জড় হয়ে যায় ধানক্ষেতের পাশে। আশপাশের গ্রাম থেকে লোকজনও চলে আসে বাঘ লোকালয়ে ঢোকার খবর পেয়ে। বাসিন্দা পিন্টু মণ্ডল বলেন, এর কয়েক দিন আগে বাঘ মনসাতলা ও পূর্ব দেবীপুর গ্রামের কাছে এসেছিল। বাঘের পায়ের ছাপও দেখা গিয়েছে। আজমলমারি ১ নম্বর জঙ্গল থেকে বাঘ বেরিয়েছিল তখন। নস্কর ঘেরির বাসিন্দা ভক্ত মণ্ডল বলেন, বিশ নম্বর জঙ্গল থেকে বেরিয়ে শুকুর খাওয়ার জন্য বেরিয়েছিল। শুকুর ধরতেই ঠাকুরান নদীর শাখা সাঁতরে বাঘ লোকালয়ে চলে এসেছে।
আর ও পড়ুন ভুতের উপদ্রব, ফলে ভুত থেকে বাঁচতে অভিনব কৌশল
কুলতলি, মৈপিঠ উপকুল থানার পুলিস ঘটনাস্থলে চলে আসে। পুলিস এসে রাস্তা ও ধানের ক্ষেতের আশপাশ থেকে উৎসুক জনতাদের সরিয়ে দেয়। প্রথমে ধান ক্ষেতের চার দিকে জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। তারপর আনা হয় খাঁচা। দুপুরে ক্ষেতের মধ্যে গর্জন দিয়ে বাঘ একবারের জন্য বেরিয়ে আবার ক্ষেতে পুকিয়ে পড়ে। এই গর্জন শুনেই আতঙ্কে মানুষ ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। আবার এই দৃশ্য দেখতে গিয়ে অনেকেই পুকুরে পড়েও যায়। খাঁচার মধ্যে একটি ছাগল টোপ হিসেবে দেওয়া হয়।
তারপরে বন দপ্তরের কর্মীরা খাঁচা শুদ্ধ ছাগলটিকে ক্ষেতের মধ্যে বসিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন বাঘের। রাস্তার উপরে সিঁড়ির উপর ঘুমপাড়ানি গুলি নিয়ে তৈরি থাকে বন দপ্তরের অফিসার। এদিকে, বিকাল গড়িয়ে গেলেও বাঘের দেখা পাওয়া যায়নি। দক্ষিন ২৪ পরগনার বন বিভাগের অতিরিক্ত আধিকারিক অনুরাগ চৌধুরী বলেন, বাঘটির বয়স ৮ থেকে ১০ বছর। জঙ্গল থেকে কোনও ভাবে বেরিয়ে এসেছে।