বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করে ফিরে এলো এক মতসজীবি । দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের ঝড়খালি ৩ নম্বর বিদ্যাসাগর পল্লীর বাসিন্দা মৎস্যজীবী বাবলু হালদার।আর ঝড়খালি ২ নম্বরের বাসিন্দা মৎস্যজীবী মিহির সরদার।দুজনে একটি ডিঙি নৌকায় চেপে সুন্দরবনের নদীতে কাঁকড়া ধরার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে ছিল।
গত ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরবনের ডেল হাউস জঙ্গল এলাকায় তাদের ডিঙি নৌকাটি নোঙর করে নৌকায় রান্না করছিল।রান্নার শেষে একটু গল্পগুজবে মেতে উঠেছিল দুজনে।সেই সময় সুন্দরবন জঙ্গল থেকে বাঘ বেরিয়ে এসে হঠাৎই নৌকার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।বাঘ থাবা বসিয়ে দেয় মৎস্যজীবী মিহির সরদার কানে।নৌকা থেকে নিচে পড়ে যায় বাঘের থাবায় মৎস্যজীবী মিহির সরদার।সেই সময় বাঘ মৎস্যজীবী কে টানতে টানতে গভীর জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
তখনি কোন কিছু না ভেবেই নৌকা থেকে এক লাফ দিয়ে বাঘের পিঠে চড়ে বসে মৎস্যজীবী বাবলু হালদার।বাঘের গলা জড়িয়ে ধরে ধস্তাধস্তি কস্তাকস্তি করতে থাকে মৎস্যজীবী বাবলু হালদার।বেগতিক বুঝে বাঘ মিহির সরদার কে ছেড়ে দিয়ে বাবলু হালদার কে আক্রমণ করে।চলে বাঘে মানুষের যমে টানাটানি রুদ্ধশ্বাস লড়াই।এমন রুদ্ধশ্বাস লড়াই প্রায় ত্রিশ মিনিট ধরে চলতে থাকে।
সেই সময় মিহির সরদার নৌকার আড়ালে চলে যায়।তার রক্তক্ষরণ হতে থাকে।যন্ত্রণায় কাৎরাতেও থাকে।শেষমেষ বাঘ আর মৎস্যজীবী বাবলু হালদারের ধস্তাধস্তি কস্তাকস্তি তে বাঘ বাবলু হালদার কে ছেড়ে দিয়ে জঙ্গলে পালিয়ে যাওয়ার।আর বাঘ শিকার ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় মৎস্যজীবী বাবলু হালদারের বুকে থাবা মারে এবং হাতে পায়ে কামড় দেয়।
আর ও পড়ুন সুপারসনিক মিসাইলের সফল উৎক্ষেপণ
তবে শেষ পর্যন্ত মৎস্যজীবী বাবলু হালদারের শক্তির কাছে পরাজয় স্বীকার করে পৃথিবীর বিখ্যাত সুন্দরবনের হিংস্রতম রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।বাঘ জঙ্গলে ঢুকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মৎস্যজীবী বাবলু হালদার তার সঙ্গীকে নৌকায় তোলে।আর এক মুহূর্ত দেরী না করে নিজেই নৌকার হাল বেয়ে গ্রামের উদ্দ্যেশে রওনা দেয়।রাতের অন্ধকারে দীর্ঘ জলপথ অতিক্রম করে ৯ ডিসেম্বর ভোরে ঝড়খালি গ্রামে ফেরেন তারা।
এমনি ভাবেই জখম মৎস্যজীবী বাবলু হালদার ঘরে বসেই বলতে থাকলেন।কি হয়ে ছিল সেদিন তা গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরলেন তিনি।তবে তার সঙ্গী মৎস্যজীবী মিহির সরদার কলকাতা চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাও তুলে ধরলেন মৎস্যজীবী বাবলু হালদার।এদিকে বাঘের পিঠে ঝাঁপিয়ে পড়ে লড়াই করে সঙ্গীকে বাঁচিয়ে নিজেও বেঁচেছেন। এমন খবর এলাকায় চাউর হতেই লোকজন বাবলু হালদার কে দেখার জন্য তার বাড়িতে ভীড় জমাতে থাকে।রাতারাতি বাবলু নায়ক হয়ে যায়।
সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে মৎস্যজীবী বাবলু হালদারজানান কলকাতায় রাজ মিস্ত্রির কাজ করতাম।করোনা ভাইরাস অতিমহামারি এবং লকডাউনে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।পেটের জ্বালায় নদীতে কাঁকড়া ধরতে যাচ্ছিলাম।এর আগে বেশ কয়েক বার গিয়ে ছিলাম।এই ভাবে বাঘের আক্রমণের মুখে পড়বো ভাবতে পারিনি।মিহির দাকে বাঁচাতে নৌকা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ি বাঘের উপর।বাঘের গলা জড়িয়ে ধরি।চলে প্রায় কুড়ি থেকে ত্রিশ মিনিট ধরে ধস্তাধস্তি কস্তাকস্তি।তারপর বাঘ আমার বুকে থাবা মারে এবং হাতে পায়ে কামড় দিয়ে জঙ্গলে ঢুকে যায়।তিনি আরও জানান সরকারি ভাবে যদি সাহায্য মেলে কিংবা আবার ও যদি গ্রামে অথবা কলকাতা কোন কাজে যেতে পারি তাহলে আর কোনদিনও জঙ্গলে বাঘের ডেরায় কাঁকড়া ধরতে যাবেন না। তবে যদি তা না হয় পেটের জ্বালা নিবারণের জন্য আবারও কাঁকড়া ধরতে যেতে হবে এমনটা মতামত বাবলু হালদারের।
তবে সেদিনের সাহসিকতার হিসাবে বাবলু হালদারের গায়ে রয়েছে বাঘের দাঁতের নখের দাগ।চলছে তার চিকিৎসা।আর এই সাহসিকতা জন্য তার জোটেনি কোন সাহায্য বা পুরস্কার।তবে এ বিষয়ে বাসন্তী কেন্দ্রের বিধায়ক শ্যামল মন্ডল বলেন বাঘের আক্রমণে দুজন মৎস্যজীবী জখম হয়।একজন মৎস্যজীবী কলকাতা চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।আর এক জন বাসন্তী গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।আর এই দুজন মৎস্যজীবী যাতে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পায় সে বিষয়ে দেখা হচ্ছে।