যে ট্রেনে ভ্রমণে লাগেনা টিকিট, আছে আমাদের দেশেই । টিকিট ছাড়া ট্রেনে ওঠা সম্পূর্ণ অবৈধ। দেশের সব লোকাল বা দূরপাল্লার ট্রেনের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হলেও ব্যতিক্রম রয়েছে এই ট্রেনে। শতদ্রু নদীর তীর বরাবর পাহাড়ি পথে চলে সেই ট্রেন। মনোরম প্রাকৃতিক শোভা দেখা যায় গোটা পথে। তবে পথ খুব লম্বা নয়। মাত্রই ১৩ কিলোমিটার। দু’টি প্রান্তিক স্টেশন নেহরা এবং নাঙ্গাল ড্যাম। এ বার নিশ্চয়ই কিছুটা ধারণা করা গেছে এই ট্রেনের ঠিকানা সম্পর্কে।
পঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশের সীমান্ত এলাকার এই ট্রেন বিখ্যাত ভাকরা নাঙ্গাল বাঁধ এলাকা দিয়ে যায়। সাত দশক আগে এই বাঁধকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছিল এই ট্রেনের যাত্রা। জেনে রাখা দরকার যে এই ট্রেন ভারতীয় রেলের নয়। এটি পরিচালনা করে ভাকরা বিয়াস ম্যানেজমেন্ট বোর্ড। বাঁধ দেখা এবং কী ভাবে তা তৈরি হয়েছে তার খুঁটিনাটি মানুষকে জানানোর জন্যই সাত দশক আগে শুরু হয় এই পরিষেবা। স্বাধীনতার পরের বছরেই ১৯৪৮ সালে শুরু হয় এই বাঁধ তৈরির কাজ। চালু হয় ১৯৬৩ সালে। বাঁধ তৈরি শুরুর সময়েই চালু হয় এই ট্রেনের পরিষেবা। প্রথমে ছিল বাঁধ তৈরির শ্রমিকদের যাতায়াতের মাধ্যম।
আরও পড়ুন – লাল চা, ‘গ্রিন টি’-র পর এবার বাঙালির কাপে পড়তে চলেছে নীল চা
যন্ত্রপাতিও নিয়ে যাওয়া হত ট্রেনে। পরে তা পর্যটকদেরও আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে যায়। যেখানে স্টেশনে বা ট্রেনে কোনও টিকিট পরীক্ষক থাকেন না। টিকিট কাউন্টারও নেই। প্রথমদিকে এই ট্রেনটি বাষ্পচালিত ইঞ্জিন টেনে নিয়ে যেত। ১৯৫৩ সালে আমেরিকা থেকে তিনটি ইঞ্জিন আনা হয়। এখন অবশ্য অনেক বদলে গিয়েছে। এসেছে আধুনিক ডিজেল ইঞ্জিন। তবে আগের মতো এখনও রয়েছে কাঠের বগি। সেই বগিগুলি নাকি তৈরি হয় করাচিতে।
যাত্রীরা বসেন সেই ব্রিটিশ আমলের কাঠের আসনে। সম্পূর্ণ বিনা খরচে ভ্রমণের এই ট্রেনটি দিনে দু’বার যাতায়াত করে। সব মিলিয়ে শ’তিনেক যাত্রী হয় রোজ। পর্যটক না থাকলেও স্থানীয় ২৫টির মতো গ্রামের মানুষের কাছে বড় ভরসার এই বিনাখরচের ট্রেন। পড়ুয়ারাও স্কুল, কলেজ যাওয়ার জন্য এই ট্রেনটি ব্যবহার করেন। স্থানীয়দের জন্য বিনাখরচে সফর চালু রেখে পর্যটকদের জন্য টিকিট চালু করার চিন্তাও অনেকবার করেছে ভাকরা বিয়াস ম্যানেজমেন্ট বোর্ড। কিন্তু ঐতিহ্য রক্ষার তাগিদ তা হতে দেয়নি।