খাপুরের যোশদারানী সরকারের পরিবারের আজ বেহাল দশা। তেভাগা আন্দোলনের কথা আমাদের সকলেরই জানা। ব্রিটিশ শাসনকালে জমিদার ও কৃষকদের সেই স্বার্থের লড়াই পড়লে আজও গায়ে কাঁটা দেয় ভারতীয়দের। কিন্তু কজনেরই বা জানা অজানা সেই অধিকারের লড়াইয়ের কথা। দেশ তখন স্বাধীন হবার জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুরোপুরি ‘করেংগে ইয়া মরেংগে’ মুখীতে উত্তাল। তার মধ্যেই অবিভক্ত ভারতের এই দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট থানার অধীন খাপুরে ঘটে গেল জমিতে বোনা ধানের ফসলের তিন ভাগ নিয়ে কৃষি বিপ্লব।
কৃষকদের দাবি ছিল গায়ের ঘাম পায়ে ফেলে বোনা ধানের উৎপাদিত ফসলের তিন ভাগ তাদের প্রাপ্য আর একভাগ জমিদারের।কিন্তু জমিদারও কি ছেড়ে দেবার পাত্র। চলল অধিকারের লড়াই। সেই তেভাগা আন্দোলনে স্বাভাবিক ভাবেই বৃটিশের পুলিশ জমিদারদের স্বার্থ রক্ষার্থে এগিয়ে এলো খাপুরের কৃষকদের আন্দোলন ভাংগতে। ১৯৪৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী ব্রিটিশ পুলিশ সেই আন্দোলন ভাঙতে চালালো নির্বিচারে গুলি।
সেই গুলির সামনে ঝাঝরা হয়ে গেছিল তাজা ২২ টি প্রান। আর সেখান থেকেই তেভাগা আন্দোলোনের সাথে জড়িয়ে গেল অধুনা দক্ষিন দিনাজপুর জেলার খাপুরের নাম।কৃষকদের তেভাগা অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে বৃটিশ পুলিশের সামনে বুক চেতিয়ে প্রথম যিনি দাঁড়িয়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে শহিদ হয়েছিলেন তিনি হলেন খাপুরের যোশদারানী সরকার।
প্রতিবছর এই দিনটিতে সকলে তাঁর বেদীতে মাল্যদান করলেও। কেউ খোঁজ নেয়না তাঁর পরিবারের। কারন যে কৃষক পরিবারের প্রথম শহিদ হয়েছিলেন তার পরিবারের লোকজন আজও এই গ্রামে রয়ে গিয়েছে। যশোদা রানীর হতভাগ্য পুত্রবধূ নিভা তার মানসিক প্রতিবন্ধী পুত্রকে নিয়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন এই গ্রামে। কেউ খোঁজ নেয়না তাঁদের। শুধু মাত্র শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্মিত শহিদ বেদিতে মাল্যদান আর বক্তৃতা দিয়েই দায় সেরে সবাই ফিরে যায়। তাঁদের সম্বল বলতে সরকারের দেওয়া বৃদ্ধ ভাতার হাজার টাকা ও তার পুত্রের মানসিক প্রতিবন্ধী ভাতার 1000 টাকা। এই দিয়ে কি আর সংসার চলে।
ভাঙ্গা বাড়িতে বর্ষায় জল পড়ে তাই শেষ সম্বল বাড়ির পাশে কয়েকটি গাছ ছিল তাও বিক্রি করে গতবার বাড়ি ঠিক করেছেন। রাজনৈতিক নেতারা দেখেও না দেখার ভান করে চলে যান। রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকারও চোখ বন্ধ করে থাকায় আজ চরম দারিদ্রতার মধ্যে দিয়ে দিন কাটছে দিনাজপুরের তেভাগা আন্দোলনের জননী যশোদারানী সরকারের পরিবারের। স্থানীয়দের দাবি, সরকার নিজে এই পরিবারটিকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস করুক।