সাদাম্পটন, 7 জুন: দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপে অভিযান শুরু করেছে ভারত। ম্যাচের নায়ক রহিত শর্মা। ১৪৪ বলে ১২২ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেন তিনি। ১৩টি বাউন্ডারি ও ২টি ওভার বাউন্ডারি রয়েছে রহিতের ইনিংসে। তাঁর স্ট্রাইক রেট ৬৬.৬৭। পরিসংখ্যান বলছে এটা নাকি রহিতের ওডিআই কেরিয়ারের সবচেয়ে মন্থর শতরান। কিন্তু তাতে কী হয়েছে! দ্য রোজ বোওল স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ২২৮ রান তাড়া করতে নেমে রহিতের ম্যাচ জেতানো ইনিংসের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তিনি বলেছেন, ‘আমার মতে এটাই রহিতের সেরা ইনিংস। কারণ, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। প্রবল চাপ ছিল ওর উপর। তা সত্ত্বেও রহিত যেভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে ব্যাট করেছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। উইকেট মোটেও ব্যাটিং সহায়ক ছিল না। আমি একজন ব্যাটসম্যান হিসাবে বলতে পারি, রহিতের এই ইনিংস কতটা মূল্যবান। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা নিঃসন্দেহ ভালো বোলিং করেছে। বাউন্স দিয়ে ওকে উত্যক্ত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু রহিত লক্ষ্যে অবিচল ছিল। এত জমাটি ইনিংস খুব কম দেখেছি। ওর ব্যাটিংয়ে অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাসের ছাপ ফুটে উঠছিল। পরের ম্যাচগুলিতেও রহিতের থেকে এরকম আরও অনেক ইনিংস প্রত্যাশা করছি।’
ভারতের পরের ম্যাচ রবিবার লন্ডনের কেনিংটন ওভালে। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। বছর খানেক আগেও অ্যারন ফিনচদের অনেকেই খেতাবি লড়াইয়ে রাখছিলেন না। কিন্তু বল বিকৃতিকাণ্ডে এক বছরের নির্বাসন কাটিয়ে ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভ স্মিথ জাতীয় দলে কামব্যাক করার পর ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে অজিরা। ইংল্যান্ডের পিচে পেসাররা সুবিধা পাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের পরের ম্যাচে মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্সের মতো অভিজ্ঞ অজি পেসারদের মোকাবিলা করতে হবে। তাই প্রাক্তন ক্রিকেটাররা বলছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভারত জিতলেও অনেক ত্রুটি চোখে পড়েছে। সেগুলি দ্রুত শুধরে নিতে না পারলে বিপদে পড়বে ‘টিম ইন্ডিয়া’।
প্রাক্তনরা মোটেও ভুল বলছেন না। বিরাট কোহলি সহ ভারতের টপ অর্ডার ব্যাটিং কিন্তু এখনও পরীক্ষিত নয়। কারণ, দক্ষিণ আফ্রিকা কার্যত অর্ধেক শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছিল। ডেল স্টেইন, লুঙ্গি এনগিডির মতো তারকা পেসারের অনুপস্থিতি ভারতকে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু কাগিসো রাবাদা, ক্রিস মরিসের বোলিংয়ে শিখর ধাওয়ান, লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনিরা বার বার পরাস্ত হয়েছেন। রহিত শর্মা দু’বার ক্যাচ তুলে বেঁচে যান। একবার তাঁর সহজ ক্যাচও পড়ে। ভারত জিতে যাওয়ায় এই বিষয়গুলি নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়তো হবে না, তবে টিম ম্যানেজমেন্টের উচিত এই ব্যাপারে ক্রিকেটারদের সতর্ক করে দেওয়া। এমনটাই মত প্রাক্তন ক্রিকেটারদের।
তবে এটা ঠিক, বিশ্বকাপের মতো এত বড় মাপের টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার বাড়তি চাপ থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে সহজে হারানোয় ভারতীয় দল এখন অনেকটাই চাপমুক্ত। বিরাট বলেছেন, ‘প্রথম ম্যাচ জেতাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাঠে কিন্তু আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছি। তবে ব্যাটিংয়ে আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। তবে রহিতের ইনিংসটা সত্যিই অসাধারণ। টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানের মধ্যে একজন সেঞ্চুরি করেছে। এটা যথেষ্ট ইতিবাচক। বড় রান না পেলেও রহিতের সঙ্গে খুব ভালো ব্যাট করেছে লোকেশ রাহুল। মহেন্দ্র সিং ধোনিও গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলার চেষ্টা করেছে। হার্দিক ওর সহজাত ভঙ্গিতে ম্যাচটা শেষ করেছে। আমার মনে হচ্ছে হার্দিক আইপিএলের ফর্মটা এখনও ধরে রেখেছে।’
বিগত এক বছর ধরেই ভারতীয় বোলাররা ঘরে-বাইরে দারুণ পারফর্ম করেছে। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেও সাফল্যের সেই ধারা অব্যাহত রেখেছেন যশপ্রীত বুমরাহ, যুজবেন্দ্র চাহালরা। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ে ধস নামানোর প্রাথমিক কাজটা করেন বুমরাহ। আগুনে পেস আর বলের উপর নিখুঁত নিয়ন্ত্রণ দেখে ক্রিকেট দুনিয়া বুমরাহর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বুমরাহর দেখানো পথেই দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ে স্পিনের ছোবল মারেন যুজবেন্দ্র চাহাল। তিনি চারটি উইকেট পেয়েছেন। কুলদীপ যাদবও ভালো বল করেছেন। এই জুটিকে ডাকা হয় ‘কুল-চা’ বলে। যাঁরা ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ৩৩টি উইকেট নিয়েছিলেন। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই তাঁদের ঝুলিতে এসেছে পাঁচটি উইকেট। ২০ ওভারে তাঁরা দিয়েছেন ৯৬ রান। দুই স্পিনারের প্রশংসা করে কোহলি বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের বরাবরই স্পিনের বিরুদ্ধে দুর্বলতা রয়েছে। গতবারও ওরা আমাদের স্পিনারদের বিরুদ্ধে ভালো খেলতে পারেনি। সেই কারণেই কুল-চা’কে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আমার মনে হয় দু’জনেই সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।’
বুমরাহ ১০ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে দু’টি উইকেট নেন। তিনি প্রথমে ফেরান হাশিম আমলাকে। তাঁর দ্বিতীয় শিকার কুইন্টন ডি’কক। দু’টি ক্ষেত্রেই বুমরাহ গতিতে পরাস্ত করেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ব্যাটসম্যানকে। বুম বুম বুমরাহর প্রশংসা করে কোহলি বলেন, ‘দূর থেকে বুমরাহকে বল করতে দেখা একরকম, আর ওর বলে ক্যাচ ধরার অনুভূতি অন্যরকম। আমি যখন ওর বলে কুইন্টন ডি’ককের ক্যাচটা ধরি, তারপর ১৫ মিনিট হাত ঝনঝন করছিল। তাহলেই বুঝতে পারছেন বলে কতটা গতি ছিল। নতুন বলে বুমরাহকে খেলা সত্যিই কঠিন।’