রাজনৈতিক নক্ষত্র পতন, প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদব। রাজনৈতিক নক্ষত্র পতন’ এক ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয় নেতাকে হারাল দেশ। প্রয়াত সমাজবাদী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদব। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮২বছর। প্রয়াত নেতা বেশ কিছুদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। চিকিৎসার জনীত কারনে গুরুগ্রামের মেদান্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন প্রয়াত মুলায়ম সিং যাদব।
এদিন প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদবের পুত্র অখিলেশ যাদব পিতার মৃত্যুর খবর দিয়ে সমাজবাদী পার্টির টুইটারে টুইট করে জানান, আমার শ্রদ্ধেয় বাবা এবং সমাজবাদী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা তথা সবার নেতা আর নেই। বিরোধী রাজনীতির অতি পরিচিত মুখ মুলায়ম সিং যাদব মারা গেলেন। অশীতিপর এই সুপরিচিত নেতা উত্তরপ্রদেশের তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। পরে ছেলে অখিলেশ যাদবের হাতে রাজ্যপাঠ দিয়ে বানপ্রস্থে গিয়েছিলেন মুলায়মজী। তার দুই স্ত্রীর মধ্যে তা নিয়ে ছিল বিরোধ। তবুও শেষ পর্যন্ত প্রথম পুত্রকেই রাজ্যপাঠ দিয়ে সরে যান মুলায়ম সিং যাদব। তা নিয়ে পারিবারিক ঝগড়া কম হয়নি।
তবে একটি টার্মের বেশী মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারেননি মুলায়ম পুত্র অখিলেশ যাদব। যোগী আদিত্য নাথের কাছে হার হয়। তা সত্বেও ১১৭ আসন দখলে রাখতে সম্মত হয়েছিলেন অখিলেশ যাদব। যদিও পুত্রবধু কল্পণা যাদব যোগীর দলের হয়ে জিতে পরিবারের মধ্যে বিজেপির অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন। একটা সময়ে ধর্মনিরপেক্ষতার জাতীয় স্তম্ভ হিসাবে মুলায়ম অধিক সুপরিচিত ছিলেন। শারদ পাওয়ারের সঙ্গে মুলায়ম সিং যাদব দীর্ঘদিন কংগ্রেস বিরোধী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। আর বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এরা হয়ে গিয়েছিলেন ঘোর বিজেপি বিরোধী।
ইদানীং মুলায়ম তেমন মিডিয়ায় আসতেন না। উল্লেখ্য শারীরিক অসুস্থতার কারননে গত বৃহস্পতিবারই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তরফে জানানো হয়েছিল, প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদবকে জীবনদায়ী ঔষধ দেওয়া হয়েছে, তবে অবস্থার উন্নতি দেখা দেইনি। গত সেপ্টেম্বরে মাসে শারিরীক অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদব। গতকাল প্রয়াত নেতার শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হলে তড়িঘড়ি হরিয়ানার গুরুগ্রামের মেদান্ত হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয় মুলায়ম সিং যাদবকে।
সেখানে বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে ছিলেন প্রয়াত নেতা। এদিন পরিবার সূত্রে জানা যায় যে মুলায়মের বেশ কিছু দিন ধরেই শরীর ভাল যাচ্ছিল না। তাঁর জন্য অগাস্ট মাস থেকেই চিকিৎসা চলছিল। সম্প্রতি রক্তচাপ জনিত সমস্যা সহ শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ছিলেন প্রয়াত নেতা। চলতি বছরের জুলাই মাসে ফুসফুসে সংক্রমন নিয়ে প্রয়াত হয়েছিলেন মুলায়ম সিং যাদবের স্ত্রী সাধনা গুপ্তা। উল্লেখ্য মুলায়ম সিং যাদব উত্তরপ্রদেশের তিন-তিন বার রাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে দায়িত্ব সামলেছেন।
পাশাপাশি ইউনাইটেড ফ্রন্ট সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পালন করেছিলেন। অপরদিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক মুলায়ম সিং যাদব উত্তরপ্রদেশ থেকে ১০ বার বিধায়ক ও সাত বার সাংসদ নির্বাচিত হন। প্রয়াতকালে উওর প্রদেশের মইনপুরি কেন্দ্রের লোকসভা সাংসদ ছিলেন। দরিদ্র পরিবার থেকেই উঠে আশা মুলায়ম সিং যাদব পড়াশোনার পাশাপাশি কুস্তিতেও সমান পারদর্শী ছিলেন, রাজনীতির ময়দানে আসার পরেও কুস্তির প্যাঁচ ভুলে যাননি তিনি।, বরং বিভিন্ন সময়ে তিনি রাজনীতির ময়দানে যেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেখানেও তাঁর ধুরন্ধর বুদ্ধির ছাপ পড়েছে।
আরও পড়ুন – তৃণমূল অঞ্চল সভাপতির পশু প্রেম নজর কাড়ছে এলাকাবাসীর
অনেকেই বলে থাকেন, কুস্তির আখড়ার প্যাঁচ পয়জার অন্যভাবে প্রয়োগ করেছিলেন রাজনীতির ময়দানে।কুস্তির আখড়ায় ‘চরকা দাও’ দিতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন প্রয়াত জননেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদব। ১৯৩৯ সালের নভেম্বরে উত্তরপ্রদেশের এটাওয়ায় জন্ম হয় মুলায়ম সিং যাদবের। পড়াশোনার মধ্যে দিয়েই এগোতে চেয়েছিলেন তিনি। শুধু রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়েই তাঁর তিন-তিনটি ডিগ্রি রয়েছে। তারপর রাজনীতিতে আসেন এবং তিনবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। ১৯৮৯, ১৯৯৩ ও ২০০৩ সালে উত্তরপ্রদেশের কুরসিতে বসেন মুলায়ম।
পরবর্তী সময়ে লোকসভা ভোটে মইনপুরী কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হন। অটল বিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রীও ছিলেন। শেষ লোকসভা ভোট অর্থাৎ ২০১৯ সালেও মইনপুরী থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন মুলায়ম সিং যাদব। রাজনৈতিক ভাবে মতাদর্শগত অমিল থাকা স্বত্বেও প্রয়াত মুলায়ম সিং যাদবকে অন্য চোখে দেখতেন উত্তরপ্রদেশের বিরোধী শিবিরের নেতা নেত্রীরা। এদিন প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মৃত্যুর খবর আসতেই সোসাল মিডিয়াতে টুইট করে স্মৃতিচারণ করে শোক ঞ্জাপন করেছেন প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্…