রাশিয়ার তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা ট্রাম্পের, ইউক্রেন যুদ্ধবিরতিতে চাপে মস্কো

রাশিয়ার তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা ট্রাম্পের, ইউক্রেন যুদ্ধবিরতিতে চাপে মস্কো

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram



বিদেশ – ক্ষুব্ধ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক স্থগিত হতেই মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বড় পদক্ষেপ নিলেন ট্রাম্প প্রশাসন। রাশিয়ার একাধিক নামী তেল কোম্পানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

আজ বৃহস্পতিবার ভোরে হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, রাশিয়ার দু’টি সবচেয়ে বড় তেল কোম্পানি—রসনেফট এবং লুকঅয়েল—এর উপর এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেই এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতে পারে।

রাশিয়ার পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, হঠাৎ এই সিদ্ধান্তে মস্কো-ওয়াশিংটনের সম্পর্ক আরও জটিল আকার নিচ্ছে।

মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের অফিস অফ ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোলের (OFAC) মাধ্যমে এই বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের দাবি, রাশিয়ার এই তেল কোম্পানিগুলি আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এবং তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপালে রাশিয়ার অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগবে।

OFAC-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না রাশিয়া। আলোচনায়ও আগ্রহী নয়। তাই এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এতে রাশিয়ার অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়বে।”

নিষেধাজ্ঞার ফলে রসনেফট এবং লুকঅয়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোনও ধরনের আর্থিক লেনদেন করতে পারবে না। একইসঙ্গে মার্কিন সংস্থা ও নাগরিকদেরও এই দুটি কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করতে নিষেধ করা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, “আমি চাই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ দ্রুত শেষ হোক। এই নিষেধাজ্ঞা স্থায়ী নয়। রাশিয়া যদি যুদ্ধ থামায়, আমরা আলোচনায় ফিরতে পারব।”

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের মন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “এখনই সময় হত্যালীলা বন্ধ করার এবং তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির।” তাঁর এই মন্তব্যের পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি প্রায় দুই ডলার বেড়েছে।

এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিও বুধবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৯তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ অনুমোদন করেছে। সেই প্যাকেজে রাশিয়ার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

মঙ্গলবার বুদাপেস্টে ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে ট্রাম্প ও পুতিনের আলোচনায় বসার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই বৈঠক স্থগিত হয়ে যায়। ট্রাম্পের দাবি, রাশিয়া এখনই যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহী নয়।

হোয়াইট হাউসে মঙ্গলবার দেওয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “যে এলাকাগুলোয় এখন সংঘর্ষ চলছে, সেখানে যুদ্ধ বন্ধ করতে মস্কো রাজি নয়। এই অনীহাই আলোচনার পথে সবচেয়ে বড় বাধা।”

এর আগে, হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, নিকট ভবিষ্যতে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের কোনও পরিকল্পনা নেই। কিন্তু ট্রাম্প গত সপ্তাহেই বলেছিলেন, দু’সপ্তাহের মধ্যে বুদাপেস্টে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের মধ্যে একটি প্রস্তুতিমূলক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটিও আপাতত বাতিল হয়েছে বলে জানা গেছে।

ট্রাম্প ও পুতিন এর আগে আগস্ট মাসে আলাস্কায় আয়োজিত এক শীর্ষ সম্মেলনে মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেই সময়ও তাঁদের আলোচনায় কোনও ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা যায়নি।

আন্তর্জাতিক মহলের মতে, নতুন এই নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার উপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়ালেও যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়ায় তার প্রভাব কতটা পড়বে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামে অনিশ্চয়তা তৈরি করবে। পরিস্থিতি সামলাতে বৈশ্বিক জ্বালানি মজুত পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন হতে পারে।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top