রেশম শিল্পের উন্নয়নে রাজ্যের বরাদ্দ ৭ কোটি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে রাজ্য সরকার মালদহের রেশম চাষের উন্নয়নের জন্য সাত কোটি টাকা বরাদ্দ করল। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই খুশি মালদহের রেশম চাষিরা। মালদহ জেলায় আমের পর রেশম অর্থকরী ফসল। জেলার রেশম চাষ সারাদেশের মধ্যে অন্যতম স্থান দখল করে আছে। জেলা রেশম দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই জেলায় ২১ হাজার হেক্টর জমিতে রেশমের গুটিপোকা চাষ করা হয় ।
অন্তত ৭০ হাজার পরিবার রেশম চাষ এবং সুতো উত্পাদনের সঙ্গে জড়িত । বছরে চারবার এই চাষ হয়। রেশম চাষীদের কাছ থেকে জানা যায়, জেলায় ফাল্গুন মাস এবং বৈশাখ মাস এ দু মাসে রেশমের চাষ ব্যাপক পরিমাণে হয়। কারণ এই সময় আবহাওয়ার সুস্ক থাকে। এছাড়াও জেলার রেশম দপ্তর সূত্রে আরো জানা যায় বছরে গড়ে ৬০০ মেট্রিক টন রেশমের সুতো এই জেলায় তৈরি হয়।
বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমল থেকেই এই শিল্প সরকারি অবহেলার শিকার হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার ও এই শিল্পকে বাঁচাবার জন্য এগিয়ে আসেনি। সমস্যায় জর্জরিত মালদা তথা কালিয়াচকের ঐতিহ্যবাহী রেশম চাষকে সংকট মুক্ত করতে এগিয়ে আসেনি তৎকালীন সরকার। সর্বোপরি বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা আরো কেড়ে নেওয়া হয়েছে। রেশম কীট পালনের জন্য ঘর ও ওষুধপত্র দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সংকটের মুখে থাকা রেশম চাষকে বাঁচাতে সেই আমলে রাজনৈতিক উদ্যোগের দাবি উঠলেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। মালদহের প্রায় কয়েক লক্ষ রেশম চাষী রেশম চাষী নিরুপায় হয়ে বিকল্পের সন্ধানে চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু তাদের টিকিয়ে রাখতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন – কয়লা পাচার ও বেআইনিভাবে মজুতের অভিযোগে বীরভূমে গ্রেফতার ৬
অবশেষে মোথবাড়ির বিধায়ক ও রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের উদ্যোগ এবং মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেশন চাষীদের সহায়তা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এবং প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের তদবিরে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সাত কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। এতে খুশি মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন সহ জেলার রেশন চাষিরা।
সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “মালদা জেলার অর্থকরী ফসল আম আর রেশম । রেশম শিল্পকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না ।
যাঁরা রেশম শিল্পের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের যাতে লাভ হয়, সেটাই আমি চাই। যখন আমি মন্ত্রী ছিলাম না, তখনও বিধায়ক হিসাবে জেলার রেশম শিল্পের উন্নয়নের জন্য এই দফতরে অসংখ্য চিঠি দিয়েছি। রেশম শিল্পের উন্নয়নে দাবি জানিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই ব্যাপারে জানিয়েছি। তিনি রেশম শিল্পের উন্নয়নে ব্যক্তিগতভাবে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
তিনি এই শিল্পের উন্নয়নে ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন । আরও কিছু প্রস্তাব আমি পাঠিয়েছি । আশা করছি, আগামী দিনে সেই প্রস্তাবগুলিও অনুমোদন পাবে ।”
পাশাপাশি তিনি কেন্দ্রীয় রেশম পর্ষদের এ ব্যাপারে ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। এই অর্থ বরাদ্দের জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রী ও রেশম কমিশনারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তবে পলু পোকা চাষ ও রেশম গুটি উত্পাদন দিনের পর দিন কমতে থাকায় ব্যবসায়ী থেকে সাধারন চাষিরা উদ্বেগে রয়েছেন।