লক্ষ্মীপূজোর রাতে আলোয় ঝলমল করে হাওড়ার লক্ষ্মী গ্রাম

লক্ষ্মীপূজোর রাতে আলোয় ঝলমল করে হাওড়ার লক্ষ্মী গ্রাম

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

লক্ষ্মীপূজোর রাতে আলোয় ঝলমল করে হাওড়ার লক্ষ্মী গ্রাম। রাজ্যে কয়েকটি স্থানে বিশেষ বিশেষ পুজোর রোশনাই সেরা। যেমন চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজা কিংবা বাঁশবেড়িয়ার কার্তিক পূজো অথবা বারাসাতের কালীপুজো। এদের যেমন নাম, ঠিক একইভাবে রাজ্যে প্রসিদ্ধ হাওড়ার জয়পুর‌ থানা এলাকার খালনা গ্রামের লক্ষ্মী পুজো। এখানে দুর্গোৎসবের সময় থেকেই সাজো সাজো রব পড়ে যায়। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর পূর্ণিমাতে চন্দ্রালোকিত রাতে ঝলমলিয়ে ওঠে লক্ষ্মী গ্রাম।

 

পুজোর জৌলুস অনায়াসে টেক্কা দেবে কলকাতার যেকোনো বারোয়ারি দুর্গা পূজাকে। এখানে বাঙালীর প্রিয় দুর্গা পূজার মতোই দেবী লক্ষ্মী স্বমহিমাতে বিরাজমান। তাই দুর্গা প্রতিমার নিরঞ্জন পর্বের পর, রাজ্যের অন্য যেকোনো পূজা প্যান্ডেলে নমো নমো করে সারা হয় লক্ষ্মীপুজো। এটাই রীতি সর্বত্র। কিন্তু, এ গ্রামের লক্ষ্মী আরাধনা সারা বাংলায় স্বতন্ত্র। সেই কারণেই এই গ্রামকে গসকলে এক নামে ‘লক্ষ্মীগ্রাম’ নামেই চেনে। হাওড়ার জয়পুরের খালনায় বিজয়া দশমী কাটলেই শুরু হয় শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। লক্ষ্মী উৎসব ঘিরে আবাল বৃদ্ধ বনিতা এখানে উন্মাদনা তুঙ্গে ওঠেন।

 

আসলে এই গ্রামে দুর্গা পূজা হয় না যে তা নয়। তবে এখানে গ্রামের কুলদেবী রূপে লক্ষ্মী বিরাজমান। প্রায় তিনশো বছরের সুপ্রাচীন লক্ষ্মীপুজোগুলো এখন ঐতিহ্যের স্মারক হওয়ার সাথে সাথে ক্রমেই হয়ে উঠেছে থিম নির্ভর। এখানে বিভিন্ন থিমের পূজাতে ভিন্ন বিষয় ভাবনায় স্বতন্ত্র চোখে পড়ার মতো। এই গ্রামের চারুময়ী, লক্ষ্মীতলা, কৃষ্ণরায়তলা, ক্ষুদিরায়তলার পুজো সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্য মন্ডিত। সেই ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার স্পর্শ লেগে এখন নতুন অভিনবত্ব নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে পুজো উদ্যোক্তারাও।

আরও পড়ুন – খেলার মাধ্যমে প্রয়াত খেলোয়াড়ের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি

এই গ্রামের প্রাচীন ঐতিহ্যশালী পুজোমণ্ডপগুলিকে থিম ভিত্তিক ভাবনায় রীতিমতো প্রতিযোগিতার মুখে দাঁড় করিয়ে দেয় নতুন পুজো মণ্ডপগুলি। প্রতি বছর বন্যায় সর্বস্বান্ত হওয়া কৃষকরা লক্ষ্মীদেবীর কৃপার আশায় আজ থেকে প্রায় আড়াই-তিনশ বছর আগে পশ্চিম খালনা এলাকায় চারুময়ী লক্ষ্মী পুজো করেন। এরপর থেকেই এই গ্রামে লক্ষ্মীর আরাধনা শুরু হয় বলেই স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। সময়ের বিবর্তনে এখানেও শুরু হয় থিমের পুজো। গত কয়েক দশকে এই থিম পুজোর প্রসার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকার মানুষও কৃষি কাজ ছেড়ে স্বর্ণ, লৌহ ও অন্যান্য ব্যবসায় মনোনিবেশ করছেন।

 

আর তার মধ্যে দিয়েই পৌঁছেছেন উন্নতির শিখরে। তাঁদের আরও বিশ্বাস, লক্ষ্মী দেবীর কৃপাতেই কৃষিকাজে ভরাডুবির পর তাঁরা ব্যবসায় সমৃদ্ধি লাভ করেছেন। খালনা ক্ষুদিরামতলায় কোহিনূর ক্লাবের পুজো ৮২ বছরের, হয়েছে স্মৃতি লক্ষ্মী মন্দির। করুণাময় কিশোর সংঘের ৯০ বছরের পুজো অসাধারণত্বের দাবি রাখে। ‘আমরা সবাই’ পুজো কমিটির ৯০ বছরের বেশি প্রাচীন পুজো। কৃষ্ণ রায়তলা পুজো কমিটির ১১৯ বছরের পুজোর ছাড়াও মিতালী সংঘ, একতা প্রভৃতি পুজোগুলিও প্রশংসার দাবি রাখে। ক্রমেই ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির বদল হয়ে এখন বারোয়ারির রূপ ধারণ করেছে এই পূজা। সময়ের সাথে সাথে তা পরিণত হয়েছে উৎসবে।

 

এই উৎসবমুখর লক্ষ্মীপুজো দেখতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ও জেলা থেকে ভিড় করে লক্ষ লক্ষ মানুষ কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে। আর এই সময়ে গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে তাঁদের নিকট আত্মীয় পরিজনের সমারোহ দেখা যায়। দূরদুরান্তের দর্শনার্থীদের সমাগমে পরিপূর্ণ হয় গ্রামের সমস্ত পুজোমণ্ডপ। সারা রাত্রি ব্যাপী দর্শনার্থীদের জন সমুদ্র কলকাতার দুর্গা পূজাকে মনে করিয়ে দেয়। গ্রামজুড়ে তৈরি হয় এক উৎসবের পরিমণ্ডল। টানা তিনদিন ধরে জমজমাট মেলা-পরিবেশ এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। লক্ষ্মীপূজোর দিন থেকেই লক্ষী গ্রামে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও স্থানে স্থানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top