দিল্লি – সোমবার সন্ধ্যা। অফিস ফেরত ভিড়, যানজটে ঠাসা দিল্লির লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের সামনের রাস্তা। সময় তখন সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিট। সিগন্যাল লাল হতেই সব গাড়ি থেমে যায়। ঠিক সেই মুহূর্তেই একটি হুন্ডাই i20 গাড়ি ভয়াবহ বিস্ফোরণে উড়ে যায়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা, আগুনে পুড়ে যায় আশপাশের গাড়ি, আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে পড়ে ব্যস্ত চত্বর।

চোখের পলকে মৃত্যু, আগুনে ঝলসে গেল দেহ
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের তীব্রতায় রাস্তার পাশে দাঁড়ানো মানুষজন ছিটকে পড়েন। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে দেহের অংশ, ভস্মীভূত হয় একাধিক যানবাহন। আশেপাশের বাড়ির জানলার কাচ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। প্রথম ফোন যায় ফায়ার ব্রিগেডে সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিট নাগাদ। দিল্লি ফায়ার ডিপার্টমেন্টের রিপোর্টে উল্লেখ— “Some kind of Blast and Vehicle Fire, Lal Qila Metro Station Gate No.1 near Gauri Shankar Mandir.”

তদন্তে ভয়াবহ তথ্য, ধোঁয়াশায় বিস্ফোরণের কারণ
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণটি ঘটে চলন্ত হুন্ডাই i20 গাড়ির পিছনের অংশে। গাড়িটিতে যাত্রীও ছিল। এটি কোনও পার্ক করা গাড়ি ছিল না, এবং ঘটনাস্থলে উচ্চক্ষমতার বিস্ফোরণে তৈরি হওয়া গর্তের চিহ্নও মেলেনি। মৃতদের শরীরে শার্পনেল ইনজুরির চিহ্ন নেই— মৃত্যুর কারণ দগ্ধ হওয়া। ফলে বিস্ফোরণের প্রকৃতি নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এটি সিএনজি বা ফুয়েল ট্যাঙ্কের বিস্ফোরণ, নাকি পরিকল্পিত হামলা— তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তিন মিনিটে আতঙ্ক, অর্ধঘণ্টায় মৃত্যু নয়জনের
বিস্ফোরণের তিন মিনিটের মধ্যে দমকল ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। কিছুক্ষণ পর, ৭টা ৫০ মিনিট নাগাদ এলএনজেপি হাসপাতাল জানায়— মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

তদন্তে একসঙ্গে এনআইএ, এনএসজি ও এফএসএল
ঘটনার গুরুত্ব বুঝে সঙ্গে সঙ্গে তদন্তে নামে এনআইএ (NIA), এনএসজি (NSG) ও এফএসএল (FSL)-এর বিশেষজ্ঞ দল। ফরেনসিক টিম ঘটনাস্থল থেকে প্রমাণ সংগ্রহ শুরু করেছে। আশেপাশের সব সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, “সব দিক থেকেই তদন্ত চলছে, কোনও সম্ভাবনাই উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।”

আতঙ্কে দিল্লি, গোটা দেশে জারি হাই অ্যালার্ট
বিস্ফোরণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজধানীজুড়ে জারি হয় হাই অ্যালার্ট। পাশাপাশি মুম্বই, কলকাতা, জয়পুর, লখনউ সহ একাধিক বড় শহরেও সতর্কতা জারি হয়েছে। দেশের অন্যতম প্রতীক লালকেল্লার কাছেই এমন বিস্ফোরণ ঘটায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে সর্বত্র।

চাক্ষুষ সাক্ষীদের বর্ণনায় বিভীষিকার চিত্র
এক স্থানীয় দোকানদার জানান, “জীবনে এমন আওয়াজ শুনিনি, মনে হচ্ছিল মাটি কেঁপে উঠছে। তিনবার মাটিতে পড়ে গিয়েছিলাম।” অন্য এক বাসিন্দা বলেন, “রাস্তা জুড়ে রক্ত আর দেহের অংশ পড়ে ছিল, কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না।” আহত অটোচালক জিশান বলেন, “আমার সামনে গাড়িটা ছিল, দু’ফুট দূরে। হঠাৎ আগুন ধরে গেল, তারপর বিস্ফোরণ। বুঝতেই পারিনি কী ঘটল।”

দেশজুড়ে শোক, তদন্তে নজর কেন্দ্রীয় সরকারের
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স-এ লিখেছেন, “এই মর্মান্তিক ঘটনায় যাঁরা প্রিয়জন হারিয়েছেন তাঁদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।”

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা, রাহুল গান্ধী ও অরবিন্দ কেজরিওয়ালও শোক প্রকাশ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী নাগরিকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ করেছেন।