লাল চন্দন কাঠ পাচারের ধৃদের তদন্তের স্বার্থে নিজেদের হেফাজতে নিল বনদপ্তর। গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া লাল চন্দন কাঠ পাচারের অভিযোগ ধৃত দুইজনকে নিজেদের হেফাজতে নিল বনদফতর। কারণ ‘পুস্পা গ্যাং’ এর দুই পাণ্ডা ধরা পড়ায় দুশ্চিন্তার ভাজ পড়েছে বনকর্তাদের কপালে।
প্রসঙ্গত, সোমবার রাতে বনদফতরের নর্থ গরুমারা রেঞ্জ এবং বিন্নাগুড়ি ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়াডের অভিযানে একটি ছোট বিলাসবহুল গাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল প্রায় ৪২০কিলো লাল চন্দন কাঠ। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় গাড়িতে থাকা দুজনকে। ধৃতরা আন্তর্জাতিক পাচারচক্রের সঙ্গে যুক্ত কিনা তা নিয়ে ধৃত দুইজনকে জেরা করতে চান বনকর্তারা।
তাই মঙ্গলবার বিকেল পাচটা নাগাদ ধৃতদের জলপাইগুড়ি আদালতে তোলা হয়। ধৃতদের হেফাজতের আবেদন জানায় বনদফতর। আদালতের সরকারি আইনজীবী মৃন্ময় ব্যানার্জী জানান, গরুমারা নর্থ রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসারের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ২ জন আসামীকে কোর্টে তোলা হয়। এদের মধ্যে ধৃত রোহিত ছেত্রীর বাড়ি মালবাজারে ও অমৃত থাপার বাড়ি বীরপাড়ায় বলে জানা গিয়েছে। চন্দন কাঠ আন্তঃ রাজ্য পাচারের অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের থেকে প্রায় ২৩৬ কেজি লাল চন্দন কাঠ উদ্ধার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন – বাঁকুড়ার পোড়া পাহাড়ে রহস্যময় গুহার সন্ধান, আদিম মানুষের বসবাসস্থল দাবী স্থানীয়দের একাংশের
এদিকে একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে ধৃতদের গ্রেপ্তার করার পর তাদের মেটেলি থানার হেফাজতে দেয় বনদপ্তর। মঙ্গলবার মঙ্গলবাড়ি গ্রামীন হাসপাতালে ধৃত ব্যক্তিরদের প্রাথমিক চিকিসার পর তাদের জলপাইগুড়ি কোর্টে পাঠানো হয়।
এদিকে বার বার তেলিপাড়া ও সংলগ্ন এলাকায় চন্দন কাঠ সহ বন্যপ্রানীর দেহাংশ পাচারের ঘটনা সামনে আসায় বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন পরিবেশ প্রেমী সংগঠনের কর্মীরা। তেলিপাড়ার ওপর দিয়ে যাওয়া ৩১সি জাতীয় সড়কের মাধ্যমে একদিকে যেমন শিলিগুড়ি হয়ে নেপালের সাথে যোগাযোগ রক্ষা সম্ভব, একই ভাবে ভুটান বা অসম রাজ্যের সাথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এই ৩১সি জাতীয় সড়ক।
আন্তঃ রাজ্য ও অন্তর দেশীয় পাচারের একটি চক্র এই এলাকায় সক্রিয় রয়েছে বলে মনে করছেন তারা। বনজ সম্পদ ও বন্য প্রানীর দেহাংশ পাচার রুখতে আরও সক্রিয় পদক্ষেপের দাবি করেছেন তারা। পরিবেশ প্রেমী সংস্থা জলপাইগুড়ি সায়েন্স ও নেচার ক্লাবের অন্যতম সদস্য রাজা রাউত বলেন, ‘ ইদানিং কালে এই তেলিপাড়া রুট দিয়ে চন্দন কাঠ সহ বন্যপ্রানীর দেহাংশ পাচারের খবর বেশী সামনে আসছে। এই রুট কি তাহলে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে নাকি বিকল্প রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এই রুটটি চিকেন নেক হিসেবে পরিচিত হওয়ায় অসমের মত রাজ্য তো বটেই, প্রতিবেশী দেশের মধ্যে পাচার চক্র সক্রিয় হতে পারে। তাই কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার উভয় কেই খুব সতর্ক ভাবে এই রুটের ওপর নজরদারি চালানো প্রয়োজন বলে মনে করি। ’ জলপাইগুড়ি বন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করার জন্য রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল। তাদের জেরা করে পাচারের ব্যাপারে তথ্য বের করার চেষ্টা চালানো হবে। তবে কেন ডূয়ার্সের এই রুট দিয়ে চন্দন কাঠ পাচারের ঘটনা সামনে আসছে তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছে বনদপ্তর।