বাংলাদেশের হিংসা নিয়ে শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি লিখলেন তসলিমা । প্রতিবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন এবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হওয়া অত্যাচার নিয়ে খোলা চিঠি লিখলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে । দুর্গা পুজোর সময় থেকেই বাংলাদেশের কুমিল্লাতে দুর্গামন্ডপ ও মূর্তি ভাঙা এবং হিন্দুদের উপর আক্রমণ শুরু হয়েছে। এরপর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়াতে এই ইসলামি মৌলবাদের ও সংখ্যালঘু হিন্দুদের বিরুদ্ধে আক্রমণের তীব্র বিরোধিতা করে পোস্ট করে আসছেন তসলিমা৷
বৃহস্পতিবার একটি ফেসবুক পোস্টে তসলিমা লেখেন,বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি। মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা। আপনার প্রতি শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস দেশের সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের আছে। যে কোনও দুর্যোগ মোকাবিলা করতে আপনিই পারেন। দেশের এই চরম দুর্দিনে আপনি হাল ধরুন শক্ত হাতে। যে ধর্মনিরপেক্ষতার স্বপ্ন নিয়ে একাত্তরে বাঙলার মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, সেই ধর্মনিরপেক্ষতা ভেঙে গুঁড়ো করতে চাইছে কিছু বদ লোক, এই ধর্মনিরপেক্ষতাকে আবার ইস্পাতের মতো সবল এবং শক্তিশালী করতে আর কেউ নয়, আপনিই পারেন।
এর আগে বাংলাদেশে যে কোনও মৌলবাদের হিংসার ইস্যুতে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া ভাষায় সমালোচনা করে এসেছেন তসলিমা৷ এবার সেখান থেকে হাসিনার প্রতি সুর অনেকটাই নরম করেছেন প্রতিবাদী লেখিকা। তসলিমা আরও লেখেন, ‘আমরা সকলেই জানি, অনেকের চোখের আড়ালে এক নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠেছে, যাদের অসহিষ্ণুতা, অমুসলিমবিদ্বেষ, নারীবিদ্বেষ ধীরে ধীরে বিকট হয়ে উঠেছে। এরা হিংসের, ঘৃণার, বিদ্বেষের লাঠিসোটা আর দা’ কুড়ুল, ছুরি চাপাতি হাতে নিয়ে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে প্রতিবেশিকে আঘাত করতে। একাত্তরে আমরা ভিনভাষী, ভিন সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে বাস করতে পারিনি বলে বাংলা ভাষা আর বাংলা সংস্কৃতিকে ভালোবেসে পৃথক হয়েছি। আর আজ যদি বাঙালিই বাঙালিকে অসম্মান করে, তাহলে জয় হবে বাঙালি বিদ্বেষী একাত্তরের শত্রুদের। এই অসহিষ্ণু নতুন প্রজন্মকে কারা গড়ে তুলেছে, তাদের অচিরে চিহ্নিত করতে হবে, এবং অন্ধত্ব, সংকীর্ণতা, বিভাজন আর বিদ্বেষের গ্রাস থেকে মানুষকে মুক্ত করতে হবে। তা না হলে দেশের ভবিষ্যত বড় ভয়াবহ।’
আর ও পড়ুন ফাষ্টফুড খাওয়ার আগে যে বিষয়গুলি মনে রাখতে হবে
১৯৭১ থেকেই বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের বিতাড়ন ও পালিয়ে আসার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তসলিমা ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘দেশ জুড়ে হিন্দুদের ওপর এত বড় হামলার পর কত সহস্র হিন্দু দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হবে জানিনা। আমার আশংকা হয় একটি বড় অংশই রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যাবে পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে, প্রিয় স্বদেশ ছেড়ে। জীবন বাঁচাতে দীর্ঘকাল ধরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দেশ ত্যাগে বাধ্য হচ্ছে। মানুষ সবার আগে চায় জীবনের নিরাপত্তা। প্রতিটি নাগরিককে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।’