শান্তিনিকেতনে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবাড়ি ভাঙচুর: ইতিহাস মুছে দেওয়ার পথে এক বেদনাদায়ক অধ্যায়

শান্তিনিকেতনে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবাড়ি ভাঙচুর: ইতিহাস মুছে দেওয়ার পথে এক বেদনাদায়ক অধ্যায়

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram



বীরভূম – বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী ও সাহিত্যিক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ‘আবাস’ ভেঙে ফেলার ঘটনাকে ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শান্তিনিকেতনে। পৌরসভার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রবিবার সকালে ফের শুরু হয়েছে বাড়িটির ভাঙচুরের কাজ। সকাল ৯টা নাগাদ একটি আর্ট অর্ডার এনে ঐতিহ্যবাহী এই বাড়িটি সম্পূর্ণভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। অথচ বাড়ির মূল ফটকে এখনও ঝুলছে বোলপুর পৌরসভার দেওয়া তালা। প্রশ্ন উঠেছে—তাহলে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এই ভাঙার কাজ কীভাবে চলল?

এর আগেও প্রথম দফায় ভাঙচুর শুরু হলে পৌরসভা হস্তক্ষেপ করে গেটে তালা লাগিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। তবে এবার সেই নিষেধ কার্যত অগ্রাহ্য করেই গড়িয়ে পড়েছে স্মৃতিমাখা ‘আবাস’। সংবাদমাধ্যমের তরফে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও বোলপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান পর্ণা ঘোষের কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

এই বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শান্তিনিকেতনের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, আবেগ এবং শিল্পচর্চার দীর্ঘ পরম্পরা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইপো ও ভারতীয় শিল্প আন্দোলনের পথিকৃৎ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহুদিন এই বাড়িতে বসবাস করেছেন। এই বাড়ির নির্মাতা ছিলেন তাঁর ছেলে অলকেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর স্মরণেই এলাকার নামকরণ হয়েছিল ‘অবনপল্লী’।

বাড়িটির ধ্বংসে শুধুমাত্র একটি স্থাপত্য নয়, মুছে যাচ্ছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস—এমনই মনে করছেন শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক, আশ্রমিক ও বহু সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ। তাঁদের প্রশ্ন, “যদি এক জাতীয় স্তরের শিল্পীর স্মৃতি রক্ষায় প্রশাসন ব্যর্থ হয়, তাহলে শান্তিনিকেতনের ভবিষ্যৎ কোন পথে?”

জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী এই জমিতে বহুতল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ফলে আশঙ্কা, কবিগুরুর আদর্শে গড়ে ওঠা শান্তিনিকেতন কি তবে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে বাণিজ্যিক লোভের জালে?

উল্লেখ্য, অবনীন্দ্রনাথ কেবল চিত্রশিল্পেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না; তিনি ছিলেন এক অসাধারণ সাহিত্যিকও। ‘রাজকাহিনী’, ‘ক্ষীরের পুতুল’, ‘নালক’, ‘ভারত শিল্প’, ‘শকুন্তলা’—এইসব কালজয়ী গ্রন্থ আজও পাঠকের হৃদয়ে সমান প্রাসঙ্গিক। তাঁর শিল্পচর্চা, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আত্মিক বন্ধন এবং শান্তিনিকেতনের শিল্প-সংস্কৃতির অনুষঙ্গে তাঁর অবদান আজ ইতিহাসের অংশ।

এই ভাঙচুরের পর, শান্তিনিকেতন শুধু একটি স্থাপত্য হারাল না—হারাল এক অধ্যায়, এক আবেগ, এক প্রজন্মের স্মৃতি। প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা এবং আগ্রাসী আধুনিকায়নের চাপে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐতিহ্যবাহী স্মৃতিচিহ্ন আজ শুধুই অতীত হয়ে রইল।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top