নদিয়া – নদিয়ার শান্তিপুর সুত্রাগড়ের তামলিপাড়ার বাসিন্দা ২৭ বছরের সামন্ত হাজরা আজ এক অনন্য সাফল্যের গল্প লিখেছেন। ছোটবেলায় মায়ের মাখা আটা দিয়ে জীবজন্তুর প্রতিমা গড়া যেখান থেকে শুরু, সেখান থেকে আজ তাঁর হাতে তৈরি প্রতিমা পৌঁছে যাচ্ছে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া তাঁর শিল্পকর্মের ছবি এখন রাজ্য, দেশ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বিপুল চাহিদা তৈরি করেছে।
ছোটবেলায় বাবা হারানো সামন্ত বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও শিল্পকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। অসুস্থ মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে সংসারের দায়িত্ব যেমন সামলান, তেমনি দুইটি পাওয়ার লুমে কাজ করেই সংসারের আয়ও চালান। কিন্তু শিল্পের প্রতি গভীর টান তাঁকে নিয়ে এসেছে এক ভিন্ন জগতে। শখের বসে শুরু হওয়া মিনিয়েচার মূর্তি তৈরি আজ তাঁর পেশা এবং পরিচয়ের প্রধান মাধ্যম।
সামন্তের তৈরি প্রতিটি প্রতিমাই সম্পূর্ণ হাতে তৈরি। কোনও ছাঁচের ব্যবহার নেই, শুধুমাত্র সলিড মাটির উপর নির্ভর করে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলেন সূক্ষ্ম শিল্পকর্ম। প্রতিটি মূর্তি তৈরিতে সময় লাগে অনেকটা, কারণ নিখুঁততা বজায় রাখতে ধৈর্য ও মনোযোগ অপরিহার্য। এবছর তাঁর হাতে গড়া একটি দুর্গা প্রতিমা চন্দননগরে পৌঁছাবে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে সেই সূক্ষ্ম কাজ।
তাঁর শিল্পকর্মের চাহিদা রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। কলকাতা, দুর্গাপুর থেকে শুরু করে দেশের নানা শহর ইতিমধ্যেই সাদরে গ্রহণ করেছে তাঁর মূর্তি। শুধু তাই নয়, বিদেশেও পৌঁছে গেছে তাঁর প্রতিভার ছাপ। সম্প্রতি একটি লক্ষ্মী প্রতিমা গিয়েছে আমেরিকায়, আর এবছরের দুর্গাপুজোতে দুবাইয়ে পূজিত হবে সামন্তের হাতে গড়া এক দুর্গা পরিবার।
শৈশবের শখের বসে শুরু হওয়া মূর্তি গড়ার যাত্রা আজ শিল্প, পরিশ্রম এবং সৃজনশীলতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। সামন্ত হাজরা এখন শান্তিপুরের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন।
