শিক্ষকের লেখা ‘দিনাজপুরের মুখোশ’ বই প্রকাশিত হল বই মেলায়। দিনাজপুর জেলার প্রাচীন সংস্কৃতি ও গ্রামীণ জনজাতিতে মুখোশের ব্যবহার বিষয় নিয়ে গবেষণাধর্মী বই প্রকাশ করলেন ইটাহার হাই স্কুলের বাংলা বিষয়ের সহশিক্ষক তথা গবেষক ড. অভিজিৎ চৌধুরী। এদিন সন্ধ্যায় মুখা শিল্পের ঘাঁটি বলে সুপরিচিত গঙ্গারামপুর বইমেলায় এই গবেষণা ধর্মী বইটি প্রকাশিত হয়। বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে মুখাশিল্পীদের উপস্থিতি ছিল বই প্রেমী সাধারণ মানুষের কাছে অভিনব, এমনটাই জানিয়েছেন বইমেলার উদ্যোক্তারা। জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে দিনাজপুর জেলার মুখা শিল্প ও শিল্পীদের বিবর্তন নিয়ে গবেষণা করছেন ড. অভিজিৎ চৌধুরী। সেই গবেষণার ক্ষেত্রটিকেই এবার বই আকারে প্রকাশ করলেন তিনি।
এদিন বই প্রকাশ করে লেখক বলেন, আদি – অস্ত্রাল আলপীয় বিবিধ জনজাতি ও সংস্কৃতির সম্মিলনে সুদূর অতীত হতে বাঙালির ঐতিহ্যের বিবর্তনবাদের ধারাটি বিকশিত হয়েছে। আর নৃবিজ্ঞানীদের কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হল মনুষ্য সভ্যতা-সংস্কৃতির সঙ্গে তার প্রারম্ভিক ক্রিয়াকলাপ, আচার-অনুষ্ঠান, রীতি-রেওয়াজের পারস্পরিক সম্পর্ক ও বিবর্তনগত বিকাশকে অনুসন্ধান করা। সেই অনুসন্ধানের পথে দিনাজপুরের প্রাচীন সংস্কৃতি ও গ্রামীণ জনজাতির মধ্যে বিবিধ বৈচিত্র্যময় মুখোশের ব্যবহারের স্বরূপকে উপলব্ধি করা এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। নৃত্যকলায় মুখোশ ব্যবহারের আঙ্গিকটি মনুষ্যসভ্যতার প্রাচীনতম শিল্পচর্চার অন্যতম মাধ্যম। কথাটি দিনাজপুরের মুখোশ সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক।
মুখা শিল্প নিয়ে প্রথম বই প্রসঙ্গে ড. চৌধুরী আরও বলেন, আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন দিনাজপুরের গ্রামীণ জীবনের মুক্ত মঞ্চে নৃত্য- নাট্য-বিনোদনের ত্রিমাত্রিক বিন্যাসে একাধিক মুখোশ পরিহিত চরিত্রের সম্মিলনে সৃষ্ট গমীরা নৃত্যধারাটি যুগ যুগ ধরে দিনাজপুর তথা বঙ্গের অতিপ্রাচীন প্রচলিত পরম্পরাগত কৃষ্টির ধারক। বর্ণময় সেই দিনাজপুরের মুখোশ সংস্কৃতির রং-রূপ-প্রকৃতির নানান তথ্যানুসন্ধান, পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের প্রয়াসে গড়ে উঠেছে গ্রন্থটির পরিধি। লেখকের কথায়, আমার দীর্ঘ কয়েক বছরের ক্ষেত্রানুসন্ধানী গবেষণার কাজ তখন অনেকটাই শেষের দিকে, তাই গ্রন্থাকারে প্রকাশের একটা সম্ভাবনা তৈরি হওয়াতে, গৌড় বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত অধ্যাপক বিকাশ রায় গ্রন্থটি সম্পর্কে দু-চার কথা লিখে দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন – মহাসমারোহে শুরু হল অষ্টম বর্ষ পানিহাটি উৎসব ও বইমেলা
সেই ভাষ্যকেই আমার এই গ্রন্থের ভূমিকা হিসেবে রাখলাম। স্যার থাকলে নিশ্চিত আজ খুশি হতেন। বইটি মুখা শিল্প ও জড়িত শিল্পীদের এক অন্য দিশা খুলে দেবে বলে বিশ্বাস মুখা শিল্পী ভোলানাথ সরকারের। তিনি বলেন, এই প্রথম আমাদের শিল্পকে নিয়ে কোনো বই প্রকাশিত হল। এটা আমাদের শিল্পকর্মকে সকলের সামনে তুলে আনবে। এতে আমরা ভীষণ খুশি। আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করার লেখকের এই প্রচেষ্টা পাঠকের মনেও একই সঙ্গে বিস্ময় ও অনাবিল আনন্দের সুখানুভূতি সঞ্চার করবে বলেই বিশ্বাস।
বই প্রকাশের পাশাপাশি, বঞ্চিত বা বঞ্চনার শিকার এই মুখা শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়ে ড. অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, এই বইটি লেখার ক্ষেত্রে এই মুখা শিল্প ও শিল্পীরাই আমার অনুপ্রেরণা। আমার আবেদন, এই আধুনিকতার যুগে স্থানীয় এই শিল্পকে আমরা যেন ভুলে না যাই। একে আপন করে নিতে হবে। এদিনের বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখা শিল্পী ভোলানাথ সরকার, শিল্পী শিবেশ সরকার, মহিষবাথান হস্তশিল্প সমিতির সম্পাদক পরেশ সরকার, জেলা গ্রন্থাগারিক, বইমেলা কমিটির পক্ষে বিপ্লব খা, অনুপ মন্ডল সহ অন্যান্যরা।