পুরুলিয়া – পুরুলিয়ার বরাবাজার ব্লকের মুর্গাবনি গ্রাম। আদিবাসী প্রধান এই গ্রামে শতাধিক পরিবার বসবাস করেন। এলাকার ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার সুবিধার্থে ২০১৫ সালে চালু হয়েছিল মুর্গাবনি জুনিয়র হাই স্কুল। প্রথম কয়েক বছর অতিথি শিক্ষক দিয়ে স্কুলটি ভালোভাবেই চলছিল। কিন্তু গত তিন বছর ধরে বিদ্যালয়ের তালা আর খোলেনি। কারণ, কোনও স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি। অতিথি শিক্ষকরা অবসর নেওয়ার পর থেকে শিক্ষা দপ্তর নতুন শিক্ষক নিয়োগে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
বিদ্যালয়টির পরিকাঠামো যথেষ্ট উন্নত। দুটি শ্রেণিকক্ষ, ডিপ টিউবওয়েল, তিনটি জলের ট্যাঙ্ক, সোলার প্যানেল, এমনকি ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা চারটি বাথরুমও রয়েছে। অথচ যাদের জন্য এই বিদ্যালয়, সেই পড়ুয়ারা এখন অনুপস্থিত। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে স্কুল ভবন, দেওয়ালজুড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, স্কুল চালু থাকা অবস্থায় পড়ুয়ার সংখ্যা যথেষ্ট ভালো ছিল। কিন্তু এখন বাধ্য হয়ে তাদের সন্তানদের নদী পেরিয়ে ৩-৪ কিলোমিটার দূরের লটপদা হাই স্কুল, বরাবাজার হাই স্কুল বা বরাবাজার গার্লস স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে। অনেকেই এই যাতায়াতের অসুবিধার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে। ফলে ক্রমশ বাড়ছে স্কুলছুটের সংখ্যা।
গ্রামবাসী অর্চনা মুর্মুর আক্ষেপ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই জুনিয়র হাই স্কুল তৈরি হওয়ায় একসময় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা খুবই সুবিধাজনক ছিল। কিন্তু শিক্ষকের অভাবে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অভিভাবকেরা আর কোনো উপায় না দেখে সন্তানদের দূরে পাঠাচ্ছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অপূর্ব মহান্তি জানিয়েছেন, স্কুল চালু থাকলে এলাকার ছাত্রছাত্রীদের ভীষণ উপকার হতো।
স্থানীয় বাসিন্দা মঙ্গল মান্ডির কথায়, তিনি নিজে পড়াশোনা করে মানুষ হয়েছেন, এখন চান তাঁর সন্তানেরাও শিক্ষিত হোক। কিন্তু গ্রামের জুনিয়র হাই স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই পথ আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁর মতে, গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়েছে। পড়ুয়াদেরও একই দাবি—মুর্গাবনি জুনিয়র হাই স্কুল যদি পুনরায় চালু করা হয়, তবে তাদের ভবিষ্যৎ অনেকটা বদলে যেতে পারে।
