শিলিগুড়ির কাঞ্চনঝঙ্গা স্টেডিয়ামের আমূল সংস্কারে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন মেয়র গৌতম দেব । কিশোর ভারতী, যুব ভারতীর আদলে সাজিয়ে তোলা হবে শিলিগুড়ি শহরের অন্যতম পরিচিতি হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা কাঞ্চনঝঙ্গা ক্রীড়াঙ্গনকে।
ক্রীড়া জগতের ক্রিকেটার ঋদ্ধিমান সাহা, হকি খেলোয়াড় শ্যাম থাপা, ভারতীয় ফুটবল অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী তিন কিংবদন্তি খেলোয়াড়ের নিয়ে গঠিত নব নির্বাচিত কমিটির পরামর্শে সেজে উঠবে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম। শনিবার শিলিগুড়ি কাঞ্চনজঙ্ঘা ক্রিড়াঙ্গনে স্টেডিয়াম পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তিবর্গের সঙ্গে স্টেডিয়ামের হাল নকশা বদলে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন মেয়ে গৌতম দেব সহ পুরনিগমের কমিশনার ও সচিব।
এদিন বৈঠকে স্টেডিয়ামে হাল নকশা বদলে যুগ উপযোগী অত্যাধুনিকভাবে সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনার স্থির হয়। মেয়র গৌতম দেব বলেন ক্রিকেটার ঋদ্ধিমান সাহা, ভারতীয় ফুটবলের অধিনায়ন সুনীল ছেত্রী, হকিংর অন্যতম খেলোয়াড় শ্যাম থাপাকে মাথায় রেখে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। মেয়র বলেন ঋদ্ধিমানের সঙ্গে কথা হয়েছে ও ত্রিপুরায় রয়েছে,শ্যাম এর মধ্যেই স্টেডিয়াম পরিদর্শনে আসবে। কিংবদন্তি খেলোয়াড়দের পাশাপাশি ১১ জনের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয় এদিন। আধুনিক পরিকাঠামোয় কিশোর ভারতী যুবভারতীর ধাঁচে স্টেডিয়ামকে সাজিয়ে তোলা হবে। স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণ এবং কর্মী বেতন পুরো বিষয়টি দেখবে শিলিগুড়ি পুরোনিগম।
শিলিগুড়ি প্রাণকেন্দ্রে কাঞ্চনঝঙ্গা স্টেডিয়ামকে ঘিরে উত্তরবঙ্গবাসির মধ্যে এক অন্য মাত্রার উন্মাদনা রয়েছে। একসময়ে শিলিগুড়ির পরিচিতির ধারক ছিল কাঞ্চনঝঙ্গা স্টেডিয়াম। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের বহু খেলা দেখতে ভিড় জমতো দূরদূরান্তের ক্রীড়াপ্রেমীদের। তবে বাম আমলে ধীরে ধীরে স্টেডিয়ামে রক্ষণাবেক্ষনে অবক্ষয় ঘটতে থাকে। বর্তমান রাজ্য সরকার ক্ষমতায় আসার পরই রাজ্য জুড়ে খেলাধুলোর ওপর নজর কায়েম করে।
এরমাঝে স্টেডিয়াম কমিটি ও মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের পক্ষে কাঞ্চনঝঙ্গা ক্রীড়াঙ্গনের রক্ষনাবেক্ষণ দুষ্কর হয়ে ওঠে।বেশ কিছুদিন আগেই রাজ্য যুব কল্যাণ ও ক্রীড়া দপ্তরের তত্ত্বাবধানে পাঁচ বছর সময়কালের জন্য স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষন ও পরিকাঠামো উন্নয়নে পুরনিগমকে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। কমিটির চেয়ারম্যান মেয়র গৌতম দেব ও কোচেয়ারম্যান পদে শিলিগুড়ি মহকুমার শাসককে মাথায় রেখেই তৈরি করা হয় কমিটি। এবারে সে কমিটিতে রাখা হয়েছে কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদদের।
জেলার স্টেডিয়াম কে কেন্দ্র করে খেলাধুলার প্রসারের উদ্দেশ্যে ক্রীড়া জগতের তারকাদের পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবে কমিটি বলে জানান শহরের মেয়র তথা কমিটির চেয়ারম্যান গৌতম দেব। মেয়র বলেন পরিকাঠামো উন্নয়নের জোড় দিয়ে স্টেডিয়ামের আধুনিকীকরনের বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলবো।
স্টেডিয়াম কমিটির একটি ফান্ড রাজ্যের কাছে আছে, স্টেডিয়াম সংস্কারে অর্থের কোন সমস্যা হবে না। এছাড়া পুরনিগম রক্ষণাবেক্ষণ ও কর্মী নিয়োগের বিষয়টির জন্য অ্যাকাউন্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। অর্থনীতিবিদ অমিত মিত্র একাউন্ট কমিটিতে উপদেষ্টা পদে থাকবেন। প্রথমত স্টেডিয়ামের সুইমিং পুলটি চালু করা হবে। প্রায় ৪৩ লক্ষ টাকা খরচ করে এই সুইমিঙপুলটি তৈরি করা হয়েছিল স্টেডিয়ামের চার নম্বর গেটে।
শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজটি করেছে। কাজটি বাবদ ২৫লক্ষ টাকা এসজেডিকে দিয়ে দেওয়া হবে। শেষ তিন বছরের স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ যাবতীয় খরচের অডিট রিপোর্ট রয়েছে তা রাজ্যকে পাঠানো হবে। অন্যদিকে মেয়র জানান ইতিমধ্যে কিছু কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। বড় দুটি প্রেক্ষাগৃহকে আধুনিকীকরণ করে আভ্যন্তরীণ খেলাধুলার ব্যবস্থা করা হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চারটি ড্রেসিংরুম করা হবে। টানেল করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে টানেল করার ক্ষেত্রে।
আরও পড়ুন – চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধে
স্টেডিয়ামে নকশার কারনে জায়গার কিছুটা সংকীর্ণতা রয়েছে। মেয়র বলেন এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে স্টেডিয়ামে পরিদর্শন করে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন। আন্তর্জাতিক ম্যাচ উপযোগী আধুনিক গ্যালারি, প্রেস বক্স থাকবে। পাশাপাশি তিনি জানান রাজনধানী শহর কলকাতার যুবভারতী ও কিশোর ভারতী যারা করেছেন সেই সমস্ত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলব ইতিমধ্যেই সে বিষয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন আমি নিজে এবং পুরো নিগমের ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে কিশোর ভারতীয় যুবভারতী পরিদর্শন করে পরিকাঠামোগত বিষয়গুলি ঘুরে দেখব।
আধুনিক পরিকাঠামো ও সাজসজ্জায় নবরূপে গড়ে উঠবে কাঞ্চনঝঙ্গা স্টেডিয়াম। মেয়র বলেন ক্রীড়া দপ্তরের সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তারিত বৈঠক করবেন তিনি। স্টেডিয়ামকে অত্যাধুনিক পরিকাঠামোয় সাজিয়ে তুলতে নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনার ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করে তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাবেন মেয়র। অন্যদিকে স্টেডিয়ামে নিরাপত্তার বিষয়টিতেও জোড় পরোখ করছে পুরনিগম। নিরাপত্তার বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে আধুনিক নিরাপদ মুখ্য গেট করা হবে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে।
নিরাপত্তা রক্ষীরা ২৪ ঘন্টা দায়িত্বে থাকবেন। সম্পূর্ণ স্টেডিয়ামের সীমানা প্রাচীর সংস্কার করা হবে। স্টেডিয়ামের ভেতরে কোনো রকম হোডিং থাকা চলবে না বলে এদিন তা সাফ জানিয়ে দেন মেয়র গৌতম দেব। স্টেডিয়াম হোডিং ফ্রি জোন হবে। স্টেডিয়ামের প্রাচীর ঘেষে বাম আমলে বেআইনিভাবে তৈরি করা হয় ওয়াটার এটিএম এদিন মেয়র ষ্পষ্ট জানিয়ে দেন কোনভাবেই এ ধরনের বেআইনী দোকান পসরা বরদাস্ত করা হবে না।
কে বা কারা অনুমোদন দিয়েছিল তা জানার প্রয়োজন নেই স্টেডিয়ামে চত্ত্বর ছেড়ে তাদের সরে যেতে হবে।এদিকে পুরনিগমের তরফে স্টেডিয়ামের খেলোয়াড়দের জন্য যে কক্ষগুলি রয়েছে তার সুসজ্জিত ভাবে সাজিয়ে তোলা হবে। সুফল বাংলার একটি স্টল থাকবে স্টেডিয়াম চত্ত্বরে। এছাড়াও শিলিগুড়ি শহরে ইন্ডোর স্টেডিয়ামে চেস একাডেমী করা হবে। যেহেতু শিলিগুড়ি কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম ফুটবল উপযোগী সেকারনে শহরের অন্যত্র আধুনিক পরিকাঠামোয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ম্যাচের জন্য সিএবির সঙ্গে কথা বলে স্টেডিয়াম গড়ে তোলা হবে। এছাড়াও শহরে আরও চার- পাঁচটি ফুটবল প্রাক্টিস ময়দান করা হবে। মেয়র গৌতম দেব বলেন আমাদের লক্ষ্য শিলিগুড়ির নতুন প্রজন্মকে মাঠমুখী করে করে ক্রিড়ার প্রসার। আমূল সংস্কারে