এবারের মকর সংক্রান্তির তারিখ ও ইতিহাস। মকর সংক্রান্তি বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ উৎসবের দিন। বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন এই উৎসব পালন করা হয়। এই দিন বাঙালিরা বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। তার মধ্যে পিঠে খাওয়া, ঘুড়ি উড়ানো অন্যতম। সারাদিন ঘুড়ি উড়ানোব পরে সন্ধ্যায় পটকা ফুটিয়ে ফানুস উড়িয়ে উৎসবের সমাপ্তি করে। বীরভূমের কেন্দুলী গ্রামে এই দিনটিকে ঘিরে ঐতিহ্যময় জয়দেব মেলা হয়।
বাউল গান এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ। মূলত জ্যোতিষশাস্ত্রের একটি ক্ষণ। ‘মকরসংক্রান্তি’ শব্দটি দিয়ে নিজ কক্ষপথ থেকে সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশকে বোঝানো হয়ে থাকে। জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী ‘সংক্রান্তি’ একটি সংস্কৃত শব্দ, এর দ্বারা সূর্যের এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে প্রবেশ করাকে বোঝানো হয়ে থাকে। মকর সংক্রান্তির উৎসব বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন নামে পালিত হয়। মনে করা হয়, এই দিনে করা দানের ফল বাকি দিনের তুলনায় বহুগুণ বেশি হয়।
শুধুমাত্র মকর সংক্রান্তির সময়ই সূর্য তার পুত্র শনির সাথে দেখা করে। শুক্রের উত্থানও ঘটে মকর সংক্রান্তিতে। এই কারণে, মকর সংক্রান্তি থেকে সমস্ত শুভ কাজ শুরু হয়। সেই সঙ্গে মকর সংক্রান্তি থেকেই ঋতুতে পরিবর্তন আসে। শীত কমতে শুরু করে এবং বসন্ত আসে। কেউ কেউ মকর সংক্রান্তির তারিখ নিয়েও বিভ্রান্তিতে রয়েছেন। আসুন, এবারের মকর সংক্রান্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক। মকর সংক্রান্তির উৎসবকে কিছু জায়গায় উত্তরায়ণও বলা হয়। এই দিনে গঙ্গাস্নান, উপবাস, ব্রত, দান ও ভগবান সূর্যদেবের পুজোর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এই দিনে করা দান অসামান্য ফলদায়ক।
শনিদেবকে আলো দান করাও খুব শুভ। পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং তামিলনাড়ুতে, এটি নতুন ফসল তোলার সময়। তাই কৃষকরাও এই দিনটিকে কৃতজ্ঞতা দিবস হিসেবে পালন করে। এদিন তিল ও গুড় দিয়ে তৈরি মিষ্টি বিতরণ করা হয়। এছাড়াও মকর সংক্রান্তিতে কিছু জায়গায় ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথাও রয়েছে। পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, মকর সংক্রান্তির দিন সূর্য দেবতা তাঁর পুত্র শনির গৃহে আসেন।
আর ও পড়ুন রেলওয়ের গ্রুপ ডি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
যেহেতু শনি মকর ও কুম্ভ রাশির অধিপতি। তাই বাবা ও ছেলের অনন্য মিলনের সঙ্গে এই উৎসবও জড়িত। অন্য কিংবদন্তি অনুসারে, মকর সংক্রান্তি অসুরদের উপর ভগবান বিষ্ণুর বিজয় হিসাবেও পালিত হয়। কথিত আছে, মকর সংক্রান্তির দিন ভগবান বিষ্ণু পৃথিবীতে অসুরদের বধ করেন এবং তাদের মাথা কেটে মান্দারা পর্বতে সমাহিত করেন।
এবারের মকর সংক্রান্তি ১৪ জানুয়ারি
পুণ্য কাল মুহুর্ত: দুপুর ২:১২ থেকে বিকেল ৫:৪৫ পর্যন্ত
মহাপুণ্য কাল মুহুর্ত: দুপুর ২:১২ থেকে ২:৩৬ পর্যন্ত (সময়কাল মোট ২৪ মিনিট)
পৌষসংক্রান্তি-তে মূলত নতুন ফসলের উৎসব ‘পৌষ পার্বণ’ উদযাপিত হয়। নতুন ধান, খেজুরের গুড় এবং পাটালি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী পিঠা তৈরি করা হয়, যার জন্য প্রয়োজন হয় চালের গুঁড়া, নারিকেল, দুধ আর খেজুরের গুড়। মকরসংক্রান্তি নতুন ফসলের উৎসব ছাড়াও ভারতীয় সংস্কৃতিতে ‘উত্তরায়ণের সূচনা হিসেবে পরিচিত। একে অশুভ সময়ের শেষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই দিনে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্গত সাগরদ্বীপে মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে কপিল মুনির আশ্রমকে কেন্দ্র করে পুণ্যস্নান ও বিরাট মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সহস্রাধিক পুণ্যার্থী ও অন্যান্য রাজ্য থেকে আগত দর্শনার্থীদের সমাগম হয় এই মেলায়।