রাতের অন্ধকারে জলছেড়ে মানুষকে সমাধি দেওয়া হয়েছে, অভিযোগ মমতার। কাউকে কিছু না জানিয়ে রাতের অন্ধকারে বুকের উপর জল ছেড়ে মানুষকে সমাধি দেওয়া হয়েছে, এভাবেই পশ্চিমবঙ্গে বন্যা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের এই বন্যা পরিস্থিতি স্রেফ মানুষের তৈরি। এর জন্য তিনি কেন্দ্রীয় সরকার এবং কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত ডিভিসির দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তোলেন।
গত কয়েকদিন ধরে একটানা বৃষ্টির জেরে জলে ভাসছে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলা। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় আটটি জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য কেন্দ্রের দিকে আঙ্গুল তুলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি মানুষের জন্য তৈরি হয়েছে।
শনিবার আকাশপথে পশ্চিমবঙ্গের প্লাবিত এলাকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর তিনি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার আরামবাগে পৌঁছে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। সেখানে স্থানীয় একটি ত্রাণ শিবিরও পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে গিয়ে কেন্দ্র এবং কেন্দ্র পরিচালিত ডিভিসির (দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন) উপর ক্ষোভ উগরে দেন দিয়ে বলেন, রাজ্যকে না জানিয়ে জল ছেড়েছে ডিভিসি। সেই কারণে পশ্চিমবঙ্গের আট জেলা প্লাবিত হয়েছে। সাড়ে পাঁচ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়েছে।
মমতা বলেন, ‘চার লক্ষ মানুষকে ত্রাণ শিবিরে সরানো হয়েছে। এক লক্ষ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। ঝাড়খণ্ড সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনা করুক। ঝাড়খণ্ড সরকারের উচিত যাতে বাঁধগুলি সংস্কার করা হতে পারে। এরই সঙ্গে কেন্দ্রকে খোঁচা দিয়ে বলেন, আমফানের সময়ও কেন্দ্র সাহায্য করেনি। এবারও করবে না। আমাদেরটা আমাদেরই করতে হবে। একসময় এই করতে করতেই সব টাকা শেষ হয়ে যাবে।
সেই সঙ্গে দাবি জানান, ‘কেন্দ্র মাস্টার প্ল্যান তৈরি করুক। মমতা আশ্বাস দেন, ‘নবান্নে গিয়ে সব রিপোর্ট নিয়ে মিটিং করব। আশা করছি খুব দ্রুত জল নেমে যাবে।’ প্রসঙ্গত, দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কার্যত জলের তলায় হুগলি, হাওড়া, বর্ধমান, বাঁকুড়া, মেদিনীপুরের একাধিক এলাকায়। ভারী বৃষ্টি এবং জলাধার থেকে জল ছাড়ায় প্লাবিত রাজ্যের একাধিক জেলা।
আর ও পড়ুন বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিতে সতর্কতা জারি, কী জানাচ্ছে আবহাওয়া দফতর
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করে বলেন, চক্রান্ত করে রাতের বেলা জল ছাড়া হয়েছে। যা এক ধরনের ক্রাইম। তিনি আভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যকে না জানিয়ে জল ছেড়েছে ডিভিসি। চাইলে আরও ২ লক্ষ কিউসেক জল ধরে রাখতে পারে, যদি ড্রেজিং করে। তা নাহলে একদিন এমন দিন আসবে আমাদের ডিভিসির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চাইতে হবে।
কারণ বছরে চারবার করে জল এলে, সব টাকা জলে চলে যাচ্ছে। মমতা এদিন নরমেগরমে ঝাড়খণ্ড সরকারকেও বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। হেমন্ত সোরেন সরকারের কাছে বাঁধগুলো সংস্কারের আর্জি জানান তিনি। এই প্লাবনকে আগেই ‘ম্যানমেড বন্যা’ আখ্যা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি এদিন অভিযোগ করে বলেন, ডিভিসি কেন্দ্রের অধীনে। কেন্দ্র আমাদের থেকে আয় করবে। আর বারবার ডিভিসি থেকে জল ছেড়ে রাজ্যকে ভাসিয়ে দেবে, তা কেন হবে? কেন্দ্রে উচিত মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা। তিনি বলেন, বুকের উপর জল ছাড়া হয়েছে। মানুষকে সমাধি করা হয়েছে। মানুষ যখন ঘুমোচ্ছিল, তখন জল ছাড়া হয়েছে।