সম্পত্তির লোভে দাদুকে খুন নাতির, আটক দুই। সম্পত্তির লোভে দাদুকে শ্বাস রোধ করে মাথার আঘাত করে প্রাণ নাশ করল দুই নাতি। ঘটনাটি ঘটেছে বাগুইআটি থানা এলাকার অশ্বিনীনগরে। ওই এলাকার চাল ব্যবসায়ী জগদীশ মল্লিক (৭৭) শনিবার রাতে নিজের বাড়ি, জে ডি ১৪ নম্বরের দোতলার ঘরেই ছিলেন। রাত সাড়ে এগারোটার পরে তার নাতি বাবাই সহ আরও এক ব্যাক্তি আসেন। এই বাড়িতেই তারা থাকতেন।
জগদীশবাবুর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই সম্পত্তিগত বিষয় নিয়ে অশান্তি চরমে উঠেছিল এই নাতিদের। ওই দিন রাতে জগদীশবাবুর শ্বাস রোধ করে তার মাথায় আঘাত করা হয়। তাতেই তিনি বাথরুমে পড়ে যান। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
জগদীশবাবুর দূর সম্পর্কের এক নাতি শানু ধারা জানিয়েছেন, “শনিবার রাতে আমি অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছিলাম সাড়ে দশটা নাগাদ। রাত একটা নাগাদ একটা আওয়াজ শুনতে পাই। তারপরেই দেখি বাড়িতে থাকা ভাড়াটে এবং দাদুর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বেশ কিছু লোক তাঁকে ডাকাডাকি করছে। পরে পুলিশ এসে ঘরের দরজা ভেঙে দাদুকে বাথরুম থেকে হাত পা বাধা অবস্থায় উদ্ধার করে।
তখনই দেখতে পাই মাথায় তার আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।” এদিকে জগদীশবাবুর ভাড়াটে কবিতা নন্দি জানিয়েছেন, “আমার শ্বাশুড়ি রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ ওনার কাছে বাড়ি ভাড়া দিতে গিয়েছিলেন। তখনও ঘরে তিনি একাই ছিলেন। এরপরে বারোটা কুড়ি নাগাদ জগদীশবাবুর চালের ব্যবসার একটি গাড়ি নিয়ে এক ব্যাক্তি আসেন।
আর ও পড়ুন মহিলাদের নিরাপত্তায় বসিরহাট উইনার্স বাহিনী
তিনি অনেকক্ষন ধরে ডাকাডাকি করেও কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে আমাদের সাহায্য চান। আমরা গিয়ে ডাকাডাকি করতেই ঘরের ভিতর থেকে একটু অন্যরকম গলার আওয়াজ শুনতে পাই। সেখানে আমাকে চলে যেত্র বলা হয়। এরপরেই রাত একটা নাগাদ জোরে আওয়াজ শুনে আমরা ছুটে যাই। পরে জগদীশবাবুর কোনও সাড়া না পেয়ে পুলিশকে জানাই। তখনই তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে জগদীশবাবু স্থানীয় তৃণমূল কর্মি। রাজারহাট টাউন তৃণমূল কংগ্রেসের যুবর সভাপতি পার্থ সরকারের ঘনিষ্ট। এই বিষয়ে পার্থবাবু জানিয়েছেন, “এই ঘটনা খুবই দুঃখ জনক। এটা তার পারিবারিক অশান্তির জেরেই হতে পারে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।” এদিকে ওই দিন রাতেই বাগুইআটি থানার পুলিশ জগদীশবাবুর নাতি বাবাই সহ আরও একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।
জানা গিয়েছে, জগদীশবাবু সম্প্রতী তার সম্পত্তি এক ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে ভাগ করে দিতে চেয়েছিলেন। জগদীশবাবুর এক ছেলে জ্যাংড়া এলাকাতে গাড়ির ব্যবসা করেন। কিন্তু তার মেয়ের পরিবার আর্থিক অনটন ছিল। সেই কারণেই মেয়ে এবং তার সন্তানরা চেয়েছিল পুরো সম্পত্তির ভাগ নিতে। সেই নিয়ে অনেক দিন ধরেই অশান্তিতে ভূগছিলেন জগদীশবাবু। শনিবার রাতেই সেই অশান্তি হয়েছিল কিনা তা জানারই চেষ্টা করছে তদন্তকারি বাগুইআটি থানার পুলিশ কর্মিরা।
এদিকে প্রতিবেশীরা আরও জানান, ঘটনা ঘটানোর পরে আততীয়া ঘরের সব জিনিস এলোমেলো করে দেন। যেন মনে হয় কিছু খোঁজাখুজির চেষ্টা চালানো হয়েছে। এরপরেই ঘরের পিছনের দিকের একটি জানলার গ্রীল, যা দরজার মতন খোলা যায়, সেখান দিয়ে কার্নিসে নেমে পিছনের ফাঁকা জমি দিয়ে পালিয়ে যায়।