বিদেশ – ভারত ও চীন তাদের দীর্ঘদিনের সীমান্ত সমস্যার সমাধানে আরও এক ধাপ এগিয়েছে। সম্প্রতি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত ডোভাল এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ২৪তম বিশেষ প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। ইতিবাচক ও গঠনমূলক পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায় দুই পক্ষ।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সীমান্ত এলাকায় বাণিজ্য পুনরায় চালু করা হবে, সরাসরি বিমান পরিষেবা ফের শুরু হবে এবং পারস্পরিক যোগাযোগের পুরোনো চ্যানেলগুলো আবার সক্রিয় করা হবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তিনটি নির্দিষ্ট সীমান্ত পথের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ফের শুরু হবে। একইসাথে, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়েও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা।
বৈঠকে দ্রুততম সময়ে সরাসরি বিমান চলাচল ও ভিসা পরিষেবা ফের চালু করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এতে ভারত ও চীনের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজ হবে। এছাড়া, ২০২৬ সাল থেকে কৈলাস মানস সরোবর যাত্রায় আরও বেশি তীর্থযাত্রীকে সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে।
২০০৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী সীমান্ত সমস্যার নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করতে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে সীমান্ত চিহ্নিতকরণের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করা হবে। এই দল ‘ওয়ার্কিং মেকানিজম ফর কনসালটেশন অ্যান্ড কোঅর্ডিনেশন’ (WMCC)-এর অধীনে কাজ করবে।
এতদিন পর্যন্ত দুই দেশের আলোচনা পশ্চিমাঞ্চল কেন্দ্রিক ছিল, তবে এখন থেকে পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চল সংক্রান্ত নতুন আলোচনাও শুরু হবে। কূটনৈতিক ও সামরিক চ্যানেলের মাধ্যমে পারস্পরিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়া এবং সীমান্ত ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী করাই দুই দেশের লক্ষ্য।
বৈঠকে সীমান্ত নদী সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় এবং বিদ্যমান চুক্তিগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়েও ঐকমত্য হয়েছে। যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে চীন মানবিক কারণে ভারতকে নদীর পানির তথ্য সরবরাহ করবে। এছাড়া, লিপুলেখ পাস, শিপকি লা পাস এবং নাথু লা পাসের মাধ্যমে সীমান্ত বাণিজ্য পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০২৬ সালে ব্রিকস সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে ভারতকে এবং ২০২৭ সালে চীনকে একে অপরের সমর্থন দেওয়ার ব্যাপারেও একমত হয়েছে দুই দেশ। পাশাপাশি, ২০২৬ সাল থেকে ভারত-চীন উচ্চ-স্তরের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বৈঠকও পুনরায় চালু হবে।
