হাওড়া – সুইজারল্যান্ডে মেয়ের কাছে যাওয়ার স্বপ্ন ভেঙে গেল হাওড়ার এক বৃদ্ধ দম্পতির, যখন ভিসার আবেদনের সময় জমা দেওয়া তাঁদের বিয়ের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটটি জাল বলে প্রমাণিত হলো। ৭০-এর কোঠায় পৌঁছেও রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন ব্রজ অধিকারী (৭২) ও তাঁর স্ত্রী কণিকা অধিকারী (নাম পরিবর্তিত)। দীর্ঘদিন ধরে সামাজিকভাবে বিবাহিত থাকলেও তাঁরা কখনও বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন বোধ করেননি। মেয়ের কাছে যাওয়ার জন্য ভিসার আবেদন করতে গিয়েই প্রথমবার সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়।
এই সময় দুই ব্যক্তির সঙ্গে তাঁদের পরিচয় হয়, যারা নিজেদের ম্যারেজ রেজিস্ট্রার বলে দাবি করে। সরল বিশ্বাসে দম্পতি সমস্ত নথি তাঁদের হাতে তুলে দেন। কিছু নথিতে সই করার পর তাঁদের হাতে দেওয়া হয় একটি সার্টিফিকেট, যা দেখতে আসল বলে মনে হলেও পরে জানা যায় সেটি ছিল জাল।
তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে, শুধু এই দম্পতিই নয়, নরেন্দ্রপুর, বীরভূম এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার আরও বেশ কয়েকটি পরিবারও একই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রতারক চক্রটি বিভিন্ন দম্পতির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে নকল শংসাপত্র সরবরাহ করছিল।
এই ঘটনার পর প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রতিটি মামলায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। হাওড়ার ওই দম্পতির ক্ষেত্রে আইন দপ্তরের অধীনে রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ম্যারেজেসের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে তাঁদের বিয়ের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা হয়। আসল শংসাপত্র হাতে পাওয়ার পর তাঁরা পুনরায় ভিসার আবেদন করেন এবং তা মঞ্জুরও হয়।
রাজ্যের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রতারক চক্রের সঙ্গে যুক্তদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে বিভিন্ন জেলার পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে আসল সার্টিফিকেটগুলিতে হাই-সিকিউরিটি কিউআর কোড থাকবে, যা স্ক্যান করলে রেজিস্ট্রির সমস্ত তথ্য পাওয়া যাবে। অন্যদিকে, জাল সার্টিফিকেটগুলিতেও কিউআর কোড থাকলেও তা স্ক্যান করলে কোনও তথ্য মেলে না।
প্রশাসনের দাবি, এই পদক্ষেপের ফলে ভবিষ্যতে বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের নামে প্রতারণা অনেকটাই রোধ করা সম্ভব হবে।
