না ফেরার দেশে চলে গেলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়, স্মৃতিচারণে কী বললেন মমতা? রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা রীতিমতো সংকটজনক ছিল। কার্ডিওলজি বিভাগের আইসিইউতে নিয়ে গিয়ে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। প্রয়াত রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। আজ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২ টো পর্যন্ত রবীন্দ্রসদনে থাকবে মরদেহ।
বয়স সত্তর পেরিয়ে গিয়েছে। মে মাসে নারদাকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। তখন হৃদযন্ত্রের সমস্যা ধরা পড়ে। ২৫ অক্টোরর রুটিন চেকআপের জন্য ফের এসএসকেএমে ভর্তি হন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এতটাই অবনতি হয় যে, আর ঝুঁকি নেননি চিকিৎসকরা। প্রথমে উডবার্নের আইসিসিউ-তে, পরে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় কার্ডিওলজি বিভাগের আইসিইউ-তে। ‘নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন’ বা বাইপ্যাপ সাপোর্টে রাখা হয় রাজ্যের মন্ত্রীকে। দেওয়া হয় অক্সিজেনও। পরে আবার বুকেও সংক্রমণ ধরা পড়ে।
মাঝে অবশ্য কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন সুব্রত। তাঁর হৃদযন্ত্রের দুটি আর্টারিতে ব্লকেজ পাওয়া যায়। সোমবার অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে হৃদযন্ত্রে স্টেন্ট বসান চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচারের পর ২ দিন আইসিইউ-তে ছিলেন সদ্য প্রয়াত পঞ্চায়েতমন্ত্রী। এদিন সকালেই উডবার্ন ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, দুপুর থেকে ফের শারীরিক অবস্থা অবনতি হয় সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। দু’বার হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তড়িঘড়ি কার্ডিওলজি বিভাগের আইসিইউ-কে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসাও শুরু হয়েছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। ঘড়িতে তখন রাত ৯টা বেজে ২২ মিনিট। প্রয়াত হন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
আর ওপড়ুন অভাবী সংসারে ফল বিক্রি করে ডাক্তারিতে সুযোগ পেলো এক ছাত্র
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে বাড়িতে কালীপুজোয় ব্যস্ত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাড়িতে চলছিল কালীপুজো। খবর পেতেই এসএসকেএমে ছুটে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সেখানেই মমতা বলে ফেলেন, ‘সুব্রতদার মরদেহ দেখতে পারব না। এমন আলোর দিনে অন্ধকার নেমে আসবে ভাবতেও পারিনি।’
শোকবার্তায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও শিল্প পুনর্গঠন মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জির প্রয়াণে আমি গভীর শোকপ্রকাশ করছি। সুব্রতদা ক্রেতা সুরক্ষা, স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দপ্তরের মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। হাসিমুখে তিনি জেলায় জেলায় ঘুরে আমাদের সরকারের কাজে অতুলনীয় অবদান রেখেছেন। কলকাতার মেয়র হিসাবে কলকাতার সামগ্রিক উন্নয়নে তাঁর বিশেষ ভূমিকা স্মরণীয়।’
মমতা শোকবার্তায় আরও বলেছেন, ‘সুব্রতদা ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত থেকেছেন। ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকেই আমি তাঁর সঙ্গে থেকেছি, তাঁর নেতৃত্বে বড় হয়েছি। সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড এবং শারদীয়া দুর্গাপুজোর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। সুব্রতদার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক ছিল। তিনি আমার অগ্রজ ও অভিভাবকতুল্য ছিলেন। তাঁর প্রয়াণ আমার কাছে এক বিরাট ক্ষতি শুধু নয়, রাজ্যের তথা দেশের রাজনৈতিক জগতে এক বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি করল।’