সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জঙ্গীপুরের হারানো বৃদ্ধাকে খুঁজে দিলেন রায়গঞ্জের হিমাংশুরা। হারিয়ে যাওয়া নিজের বয়স্ক মা কে খুঁজে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন ছেলে অমিত সিংহ। ভর সন্ধ্যায় রায়গঞ্জ সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সামনে এমন পরিস্থিতি দেখে সকলে ভেবেছিলেন, এটা হয়ত পরিবারের কাউকে হারিয়ে ফেলার বেদনা। কিন্তু রবিবার সন্ধ্যায় কাছে গিয়ে খোঁজ নিতেই জানা গেল, এটা প্রিয়জন হারানোর কান্না নয়, হারিয়ে যাওয়া জন্মদাত্রী মা কে ফিরে পাওয়ায় আনন্দের কান্না।
কিভাবে হারিয়েছিল অমিত বাবুর মা ষষ্ঠী বালা সিংহ, জানতে চাইলে অমিত বাবু জানান, দিন কয়েক আগে কালিয়াচকের দিদির বাড়ি থেকে মা বের হয় বুনিয়াদপুরে আমার বাড়ি যাবে বলে। কিন্তু ভুল বাসে চেপে রওনা দেন তিনি। বালুরঘাটের গাড়ির বদলে রায়গঞ্জের বাসে চড়ায় ভুল হয়ে যায় সবটা। রায়গঞ্জে নেমে পথ হারিয়ে দিশাহীন হয়ে পড়েন তিনি। চারিদিকে খোঁজ খবর নেওয়ার পরেও কোথাও কোনো খবর না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ি।
আরও পড়ুন – মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরে বিশ্ব শান্তি মহাযজ্ঞ
তারপর রায়গঞ্জের হিমাংশু শীলের ফোন পেয়ে জানতে পারি মা রায়গঞ্জ সরকারি মেডিক্যাল কলেজে রয়েছেন। ছুটে এসে মা কে নিজের ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এদিকে সোশাল মিডিয়ার সঠিক ব্যবহার করে যারা এই কাজ সুসম্পন্ন করেছেন, তারা হলেন হিমাংশু শীল ও তার বিপিএস ক্লাবের সদস্যরা। এদিন এই অসাধ্যকে সম্ভব করতে পেরে তারা ভীষণ খুশি। হিমাংশু বলেন, শুক্রবার বিকেলে রায়গঞ্জ নেতাজী মোড় এলাকায় আমার ক্লাবের সদস্যরা বৃদ্ধা ওই মহিলাকে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।
দ্রুত চিকিৎসার জন্য আমরা রায়গঞ্জ সরকারি মেডিক্যালে ভর্তি করি ও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোষ্ট করি, যাতে ওনার পরিবারের সদস্যদের খোঁজ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, রাজ্য জুড়ে রক্তদান আন্দোলনের সাথে আমরা যারা জড়িত, তাদের মাধ্যমেই খবর যায় মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গীপুরের নিমতিতায়। সেখানকার বন্ধুরা তথ্য দিলে ফোন করি বৃদ্ধার ছেলে অমিত সিংহকে।
উনি এসে পরিচিতি দেখালে এদিন তার হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয় তার হারানো মা কে। যাকে ঘিরে ৩ দিন ধরে চরম উত্তেজনা, সেই বৃদ্ধা ষষ্ঠী দেবী ফিরে পাওয়া ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাষাহীন হয়ে পড়েছেন। একই রকম বাকরূদ্ধ বিপিএস ক্লাবের সদস্যরাও। যে অমিত বাবু গ্রামে গঞ্জে সাধারণ মানুষের মধ্যে কথার ফুলঝুরি ছুটিয়ে আয়ুর্বেদিক ওষুধ বিক্রি করেন, তিনিও ছলছল চোখে ধন্যবাদ জানিয়ে চলেছেন রায়গঞ্জের এই একদল যুবকদের। ঘরে বসে সোশাল মিডিয়ায় সময় না কাটিয়ে, সবাই যেন এর সুফল সকলের কাছে পৌঁছে দিতে পারে, এমনটাই অনুরোধ জানালেন অমিত বাবু।