স্কুলকে সেরা স্কুল করার লক্ষ্য নিয়ে নিরলস কাজ করে চলেছেন চূড়াভান্ডার ঝাজাঙ্গি অ্যাডিশনাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিক্ষারত্ন গোবিন্দ পাল।
সোমবার, স্কুলে শিক্ষার পরিবেশ এবং পরিকাঠামো উন্নয়নে নিরলস কাজ করে চলেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। বর্তমান সময়ে গ্রাম হোক কিংবা শহর নামি দামি বেসরকারি স্কুলই অনেকের পছন্দ । সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী ময়নাগুড়ি ব্লকের চূড়াভান্ডার ঝাজাঙ্গি অ্যাডিশনাল প্রাথমিক বিদ্যালয় । এখন এই বিদ্যালয়ের সুনাম গ্রাম ছাড়িয়ে শহর পর্যন্ত । আর এই সুনামের কান্ডারী হিসেবে স্কুলের অভিভাবক অভিভাবিকারা তথা গ্রামবাসীরা যাকে প্রাধান্য দিতে চান তিনি হলেন বিদ্যালয়রই প্রধান শিক্ষক শিক্ষারত্ন গোবিন্দ পাল ।
গোবিন্দ বাবু ময়নাগুড়ি শহরের বাসিন্দা । তিনি ১৯৯৪ সালে শিক্ষকতার পেশায় আসেন । পরে ২০০৪ সালে তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে চূড়াভান্ডার ঝাজাঙ্গি অ্যাডিশনাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন । স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায় , আগে বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো মোটেই ভালো ছিল না । টিনের ছাউনি ও বাঁশের বেড়ার একটি ঘড়ে মেঝেতে বসে ছাত্র-ছাত্রীদের পঠন পাঠন চলত । ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন স্কুল হওয়ার পরেও স্কুলের কোনো সীমানা প্রাচীর ও গেট ছিল না । পানীয় জল থেকে শুরু করে শৌচাগার সবক্ষেত্রে ছিল সমস্যা । গোবিন্দ বাবু ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হয়ে আসার পরেই স্কুলের প্রগতি শুরু হয় । তৈরি হয় পাকা স্কুলঘর ও উপযুক্ত শ্রেণীকক্ষ । সীমানা প্রাচীর তৈরীর জন্য সরকারিভাবে অনুদান এখনও আসেনি ।
তাই ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে গোবিন্দ বাবু নিজের মাইনের টাকা খরচ করে স্কুলের একটি ছোট সীমানা প্রাচীর ও গেট তৈরি করেছেন । পানীয় জলের জন্য স্কুলে বসানো হয়েছে হ্যান্ড পাম ও রিজার্ভার । নির্মাণ করা হয়েছে শৌচাগার । মিডডেমিল বসে খাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে পাকার শেড । ছাত্র ছাত্রীদের শেখার সুবিধার্থে স্কুলের দেয়ালে দেয়ালে আঁকা হয়েছে বর্ণমালা , সংখ্যা , চিহ্ন ও স্বাস্থ্য বিধির তালিকা । স্কুলের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন গোবিন্দ বাবু । পঠন পাঠনের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রী উভয়ে মিলে স্কুল প্রাঙ্গণ ও শ্রেণীকক্ষ পরিষ্কারের কাজ করেন ।
যার ফলে ২০১৫ সালে সর্বশিক্ষা মিশনের পক্ষ থেকে বিদ্যালয়ের ঝুলিতে আসে নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার । বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদেরই প্রধানমন্ত্রী , শিক্ষা মন্ত্রী , স্বাস্থ্যমন্ত্রী , পরিবেশমন্ত্রী , ক্রীড়ামন্ত্রী , খাদ্যমন্ত্রীর মতো দায়িত্ব দেন গোবিন্দ বাবু । স্কুল শেষে তার উপস্থিতিতে এই পদাধিকারী ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলের পঠন-পাঠন , পরিকাঠামো , স্বাস্থ্য বিভিন্ন বিষয়ে মূল্যায়ণ করে । এইসব ব্যতিক্রমী কৌশলে বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য ২০১৭ সালে চূড়াভান্ডার গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বিদ্যালয়কে সেরা স্কুলের পুরস্কার দেওয়া হয় । স্কুলের পাশাপাশি শিক্ষা জগতে অবদান রাখার জন্য ২০২০ সালে গোবিন্দ বাবু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষারত্ন পুরস্কার পান ।
আরও পড়ুন – ব্রিটিশরা যখন পয়সা গুনছে, তখন ইউক্রেনীয়রা লাশ গুনছে, ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি
গোবিন্দ জানান , চলতি শিক্ষা বর্ষে তার স্কুলে ১১৮ জন ছাত্র-ছাত্রী ও ৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন । সরকারি নিয়ম মেনে যথাসময়ে স্কুল শুরু হয় ও পঠন-পাঠন হয় । তিনি বলেন , ‘ বিদ্যালয় আমার প্রাণ । বিদ্যালয়ের বিষয়ে আমি কোন কিছুতেই আপোষ করি না । বিদ্যালয়কে আরও উন্নত জায়গায় নিয়ে গিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করাই আমার লক্ষ্য ।’ গোবিন্দ বাবুর শিক্ষকতা ও তার স্কুলের প্রশংসা করেছেন ময়নাগুড়ি বিডিও শুভ্র নন্দী ও ময়নাগুড়ি চতুর্থ মন্ডলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক মৌমিতা শর্মা । তবে ওই বিদ্যালয়টি যেহেতু জাতীয় সড়ক সংলগ্ন তাই ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য সীমানা প্রাচীরের দাবি জানিয়েছেন গোবিন্দ বাবু ।