দিল্লী – স্ত্রীর উপর প্রবল অবিশ্বাসে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন মনোজ মাহাতো। সেই সন্দেহ ও অবসাদের চরম পরিণতি হল মঙ্গলবার ফরিদাবাদে। চার শিশুপুত্রকে নিয়ে চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হলেন এক ব্যক্তি। মর্মান্তিক এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের—একজন বাবা এবং তাঁর চার সন্তান।
বিহারের বাসিন্দা মনোজ মাহাতো পরিবার নিয়ে সম্প্রতি ফরিদাবাদে বসবাস করছিলেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, স্ত্রী প্রিয়া মাহাতোর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই মনোমালিন্য চলছিল মনোজের। স্ত্রীর প্রতি প্রবল সন্দেহ ও অবিশ্বাস থেকে ক্রমেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সকালেও দাম্পত্য কলহ চরমে পৌঁছায়। এরপরই মনোজ বলেন, তিনি সন্তানদের পার্কে নিয়ে যাবেন।
চার সন্তান—পবন (১০), কারু (৯), মুরলি (৫) ও ছোটু (৩)-কে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান মনোজ। পথে সন্তানদের জন্য চিপস ও সফট ড্রিঙ্কস কেনেন। কিন্তু পার্কের পরিবর্তে চলে যান রেললাইনের কাছে একটি উড়ালপুলের নিচে। সেখানেই ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, দুপুর ১২টা ৫৫ নাগাদ একটি এক্সপ্রেস ট্রেন আসতে দেখা যায়। মনোজ তখন দু’জন সন্তানকে কাঁধে তুলে এবং বাকি দু’জনের হাত ধরে রেললাইনের উপর উঠে পড়েন। ট্রেনচালক বারবার হর্ন বাজিয়ে সতর্ক করলেও মনোজ একটুও নড়েননি। ছোট ছোট শিশুরা জীবন বাঁচানোর জন্য চিৎকার করছিল, কিন্তু বাবা তাদের ছাড়েননি। মুহূর্তেই ধেয়ে আসে গোল্ডেন টেম্পল এক্সপ্রেস—এক ঝটকায় থেমে যায় পাঁচটি জীবন।
ঘটনাস্থলে পৌঁছায় রেল পুলিশ। উদ্ধার করা হয় পাঁচটি দেহ। মনোজের পকেটে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে, যেখানে স্ত্রীর ফোন নম্বর লেখা ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, স্ত্রীর উপর অবিশ্বাস এবং সেই থেকে তৈরি হওয়া মানসিক অবসাদ থেকেই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মনোজ।
ঘটনার পর স্ত্রীর সামনে শনাক্তকরণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় দেহগুলি। গোটা ঘটনায় শোকস্তব্ধ ফরিদাবাদবাসী। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুরো ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
