বেরিয়ে দেখলেন কর্মীরাই নেই, গরমে হতাশ অগ্নিমিত্রা একাই দৌড়ে বেড়ালেন। দিনের শুরুটা অবশ্য ভালোই করেছিলেন। ক্যামেরার সামনে বাবা মাকে প্রণাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলেন তিনি। এলআইসির বুথে নিজের ভোট দেওয়ার পর তিনি গেলেন বারাবনির দিকে। কিন্তু গিয়েই হতভম্ব। কোন কর্মী-সমর্থকদের দেখা নেই। এমনকি বারাবনি ২৪১ নম্বর বুথে গিয়ে দেখলেন তার এজেন্টও সেখানে নেই। দেখেই অগ্নিগর্ভ অগ্নিমিত্রা। চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু পুলিশের সঙ্গে। অথচ পুলিশ কোনো বাধাই দেয়নি এজেন্টকে বসতে। বরঙ বুথ কেন্দ্রীয় বাহিনীর দখলে। পরিশেষে জানা গেল এজেন্ট নিজেই আসেনি। এজেন্টকে টেনে নিয়ে এসে অগ্নিমিত্রা বসালেন।
পরের গন্তব্য বারাবনির কাপিস্টা। জামগ্রাম কাপিস্টা অঞ্চলে গ্রামের মধ্যে সরু রাস্তার মধ্যে ঢুকলেন অগ্নিমিত্রা। বাইশটি গাড়ির কনভয়। সঙ্গে গদি মিডিয়ার ১১ টি গাড়ি। সব মিলিয়ে ৩৩ টি গাড়ি গ্রামের ছোট রাস্তাকেই স্তব্ধ করে দিল। গ্রামের লোকেরা শান্তিপ্রিয়। এত গাড়ি আর অগ্নিমিত্রার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর হম্বিতম্বি দেখে বীতশ্রদ্ধ গ্রামের মানুষ। সহজ ভাবে গ্রামবাসীরা অগ্নিমিত্রা কে জানাতে গিয়েছিলেন যে আপনারা গ্রাম ছেড়ে চলে যান। এটা শান্তি প্রিয় জায়গা এখানে কোনো অশান্তি পাকাবেন না। আর তাতেই অগ্নিমিত্রা নিরাপত্তারক্ষী গেলেন ক্ষুব্ধ হয়ে।
ধাক্কাধাক্কি করলেন গ্রামের যুবকদের। যুবকরাই বা ছেড়ে কথা কইবে কেন। ধেয়ে এলেন নিরাপত্তারক্ষীদের দিকে। পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হল। কিন্তু বারাবনি থানার পুলিশ পৌঁছে সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সারাদিনে বড় অশান্তি বলতে এই একটি। এরপর তিনি জামুরিয়া গেলেন, পাণ্ডবেশ্বর গেলেন। কিন্তু কোথাও তেমন কোন সুবিধা করে উঠতে পারলেন না। কারন সঙ্গে কোনো কর্মী সমর্থক নেই। একা প্রার্থীকে ঘুরে বুথে বুথে খোঁজ নিতে হল ভোট কেমন হচ্ছে। আর ফলে স্বভাবতই সারাদিন ধরে হতাশাগ্রস্ত খিটখিটে হয়ে রইলেন অগ্নিমিত্রা পাল। যদিও মুখে তিনি অন্য কথা বলেছেন।
আর ও পড়ুন হাঁসখালি ধর্ষণকাণ্ডে আরো এক গ্রেপ্তার
অন্যদিকে একদম বিপরীত চিত্র তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহার। একদম খোশমেজাজে সকাল দশটায় হোটেলের লবিতে নামলেন তিনি। তার মুখে প্রশান্তির ছাপ। কোনও দুশ্চিন্তা,উত্তেজনা বা হতাশা কিছুই দেখা যায়নি। সঙ্গে ছিলেন আসানসোল পৌরনিগমের ডেপুটি মেয়র অভিজিৎ ঘটক। দুজনে মিলে বেশ কয়েকটি বুথ ঘুরলেন। মানুষের সঙ্গে কথা বললেন। দেদার সেলফি বিলালেন। কারোর বিরুদ্ধেই কোনও অভিযোগ করেননি শত্রুঘ্ন সিনহা।
দুপুরে হাসতে হাসতে আবার ফিরলেন হোটেলে। খাওয়া দাওয়া করে দুপুরে বিশ্রাম নিলেন। আসলে প্রার্থীকে নিজেকে কিছু করতেই হয়নি এদিন। তৃণমূলের কর্মী সমর্থক থেকে শুরু করে নেতৃত্বরা বা পোলিং এজেন্ট সামলে দিয়েছেন এই ভোট। সেই কারণে শত্রুঘ্ন সিনহা সারাদিন ছিলেন খোসমেজাজে।
অন্যদিকে বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের দেখাই পায়নি অগ্নিমিত্রা। তাই প্রার্থী হয়েও নিজেই ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সারাদিন ঘুরে হতাশ হলেন, এবং শেষপর্যন্ত সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরলেন।