হাঙর-কামট ধরামারা রুখতে পথে নেমেছে বন দপ্তর। কড়া নজরদারির ফাক গলে গোপণে সন্তর্পণে কিন্তু সামুদ্রিক প্রাণী শিকার চলছে। তাদের ডানা-পাখনা কেটে শুকিয়ে মোটা দামে দক্ষিণ ভারতে পাচার হচ্ছে। এই অবৈধ চোরাকারবার রুখতে আরও ততপর হয়েছে বন দপ্তর। কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলছে। কঠিন ব্যবস্থা নেওয়ার আগে প্রচার চালাতে শুরু করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগ।
বন্য আইন অনুসারে কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ থাকা স্বত্ত্বেও সুন্দবনের নদী গুলি থেকে নির্বিচারে ছোট বয়সের হাঙর, কামট, শঙ্কর মাছ শিকার চলছে। পরে তাদের ডানা-পাখনা কেটে শুকিয়ে শুটকি মাছের আকারে পরিণত করে সকলের চোখ এড়িয়ে গোপণে পাচার করছে এক শ্রেণীর চোরাকারবারিরা। খব খবর পেয়ে দিনকয়েক আগে বন বিভাগের ‘অভিযান বাহিনী’ আচমকা ছাপা মেরে বকখালি থেকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছে। বর্তমানে তারা শ্রীঘরে রয়েছে। দ্বিতীয়বার এই ধরণের কাজ বন্ধ করতে বন বিভাগ নানা ভাবে প্রচার শুরু করেছে। সমুদ্রে গিয়ে মাছ শিকারকারী ট্রলার ব্যবসায়ীদের সচেতন করছে এই ধরণের পরিবেশ ধ্বংসকারি ব্যবসা বন্ধ করতে।
আরও পড়ুন – পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা
ইতিমধ্যে বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জ, নামখানা, কাকদ্বীপ এবং সাগর দ্বীপের হাটেবাজারে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে এবং ফিসিং-হারবার গুলিতে লাগাতার প্রচার চলছে। কোথাও কোথাও পরিবেশ সচেতন মানুষ, গৃহবধূ এবং স্কুল পড়ুয়ারাও সামিল হচ্ছে। যুব সম্প্রদায়ের কেউ কেউ প্রতিবাদে সোচ্চার হচ্ছেন।
সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছে, ডায়মন্ড হারবার, নামখানা, কাকদ্বীপ, ফ্রেজারগঞ্জ, রায়দীঘি-সহ বেশ কিছু মৎস্য বন্দর থেকে হাঙর, শুশুক, শঙ্কর মাছের চোরাকারবার চলছে। গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করার সময় জালে জড়িয়ে যাওয়া অলিভ রিডলে কচ্ছপ, গ্রীন সী-টার্টল পিটিয়ে মেরে আবার জলে ভাসিয়ে দিচ্ছে। হারবার গুলির আশপাশে ঘোরাফেরা করলে আখছার তাদের মৃতদের ভাসতে দেখা যায়। তাদের শরীরেও আঘাতের রক্তাক্ত চিহ্ন সহজেই লক্ষ্য করা যায়।
এই ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় পরিবেশ এবং সমাজ সচেতন মানুষজন। রীতিমতো ক্ষুব্ধ দক্ষিণ ২৪ পরগনা বিভাগের ডিভিশনাল ফিরেস্ট অফিসার মিলনকান্তি মন্ডল। তিনি বলেন, ‘কোনও রকমের সামুদ্রিক প্রাণী হত্যা এবং হাঙর, কামট, শঙ্করমাছ, কচ্ছপ শিকার, ধরামারার ঘটনায় কেউ যুক্ত প্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রলার তো বাজেয়াপ্ত হবেই, ধৃতদের টানা ৭ বছরের জেল ও জরিমানা উভয়ই হবে।’ মিলনবাবু জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে কয়েকজনকে জেলে ঢোকানো হয়েছে।