হাসি খুশি , মিশুকে বাপ্পা আর নেই এটা মেনে নিতে পারছেন না খড়্গপুরের বাসিন্দারা। শুক্রবার লাদাখে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় মৃত সেনা জওয়ানদের মধ্যে রয়েছেন খড়গপুর শহরের বারবেটিয়া এলাকার বাপ্পাদিত্য খুঁটিয়া (৩২) । এবছরের এপ্রিল মাসে ১৬ দিনের ছুটি কাটিয়ে ২৭শে এপ্রিল রওনা দেন সেনা ঘাঁটির উদ্দেশ্যে। কথা দিয়েছিলেন বছর খানেক পর ফিরে এসে নতুন বাড়ি শুরু করবেন। আর ফেরা হলো না । শনিবার দুপুরে কাঁদতে কাঁদতে আক্ষেপের সুরে কথা গুলো বলছিলেন তাঁর মা রীনা খুঁটিয়া ।
শুক্রবার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লাদাখের তুরতুক সেক্টরের শিয়ক নদীতে পড়ে যায় সেনা বাহিনীর একটি বাস। এতে ২৬ জন ছিলেন। ঘটনাস্থলে মারা যান ৭ জন। গুরুতর আহত হয়েছেন ১৯ জন । মৃত ও আহত সেনা জওয়ান দের আনা হয় ওয়েস্টার্ন কমান্ড হাসপাতালে। শুক্রবার গভীর রাতে এই দুঃসংবাদ এসে পৌঁছায় খুঁটিয়া পরিবারে। তখন থেকেই দু চোখের পাতা এক করতে পারেন নি পরিবারের সদস্যরা। বাপ্পাদিত্যর স্ত্রী জলি খুঁটিয়া ও ১১ মাসের শিশু কন্যা শ্রীদীপ্তা কে জড়িয়ে কেঁদে চলেছে। বাবা সুকুমার খুঁটিয়া আরপিএফ জওয়ান ছিলেন কয়েক বছর আগে অবসর নিয়েছেন।
আরও পড়ুন – রানাঘাটে ‘মন কি বাত’ এ উপস্থিত হয়ে শাসক দলকে নিশানা দিলীপের
২০০৯ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন বাপ্পা। এর আগে দুবার নির্বাচিত হলেও একমাত্র সন্তান কে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে পাঠাতে মন চায়নি মায়ের। প্রথম পোস্টিং হয় গুজরাটে। সম্প্রতি তাঁর সিয়াচেনে পোস্টিং হয়। নতুন পোস্টিং এ যোগ দেওয়ার আগে বাড়িতে এসেছিলেন। বাবা মা , স্ত্রী সকলে তাঁকে বোঝান তিনি যেন সেখানে না যান । ওই পোস্টিং বাতিল করতে বলেন। উল্টে সাহসী সেনা জওয়ান জানান , ‘ তোমরা ভয় পেয়ো না । ভয় কে জয় করে একবার গিয়েই দেখি না সিয়াচেন।’
সিয়াচেন আর যাওয়া হলো না। বাস নদীতে পড়ে মৃত্যু হলো তাঁর মতো আরো ৬ সেনা জওয়ান এর। হাসি খুশি বাপ্পা র মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা। পরিবারে শুধুই হাহাকার। রবিবার তাঁর দেহ বাড়িতে নিয়ে আসেন সেনা বাহিনীর জওয়ানরা। খড়গপুর শহরের বারবেটিয়া এলাকায় তার বাড়িতে গিয়ে তার মৃত দেহে ফুলের মালা দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তৃণমূল কংগ্রেসের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরা সহ আরো অনেকে। সুজয় হাজরা মৃত জওয়ান বাপ্পাদিত্যর পরিবারকে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। খড়গপুর শহরে মৃত জওয়ান এর দেহ তার বাড়িতে আসার পর গোটা এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।