বিদেশ – মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার রাতে হোয়াইট হাউসে টেক দুনিয়ার শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের নিয়ে এক বিশেষ নৈশভোজের আয়োজন করেন। হোয়াইট হাউসের তথ্য অনুযায়ী, অতিথি তালিকায় ছিলেন মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, অ্যাপলের সিইও টিম কুক, মেটা প্রধান মার্ক জাকারবার্গ-সহ এক ডজনেরও বেশি শীর্ষ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও টেক সংস্থার সিইও। লম্বা টেবিলের মাঝখানে বসেছিলেন ট্রাম্প, তাঁর দুই পাশে ছিলেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প ও মেটা সিইও মার্ক জাকারবার্গ। এর আগে বিকেলে মেলানিয়া হোয়াইট হাউসের নতুন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এডুকেশন টাস্ক ফোর্সের বৈঠক পরিচালনা করেন, যেখানে বেশ কিছু টেক নেতা অংশগ্রহণ করেন।
এই বৈঠক ও নৈশভোজে অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল টেসলা ও স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্কের অনুপস্থিতি। একসময় ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও চলতি বছরে তাঁদের প্রকাশ্য সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় মাস্ককে দেখা যায়নি। ট্রাম্প একসময় তাঁকে ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট ইফিশিয়েন্সি’-র দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তবে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার পর থেকেই দুইজনের মধ্যে দূরত্ব বাড়ে। মূলত রোজ গার্ডেনে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে শেষমেশ তা স্টেট ডাইনিং রুমে স্থানান্তরিত হয়।
অতিথিদের মধ্যে আরও ছিলেন গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই, আইবিএম চেয়ারম্যান অরবিন্দ কৃষ্ণ, কোড.অর্গ প্রেসিডেন্ট ক্যামেরন উইলসন, গুগল প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন, মাইক্রোসফট সিইও সত্য নাদেলা, ওপেনএআই সিইও স্যাম অল্টম্যান ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা গ্রেগ ব্রকম্যান, ওরাকল সিইও সাফরা ক্যাটজ, ব্লু অরিজিন প্রধান ডেভিড লিম্প, মাইক্রনের সঞ্জয় মেহরোত্রা, টিবকো চেয়ারম্যান বিবেক রণদিভে, প্যালান্টিরের শ্যাম শংকর, স্কেল এআই সিইও আলেক্সান্দর ওয়াং এবং শিফট৪ পেমেন্টস প্রধান জ্যারেড আইজ্যাকম্যান। উল্লেখযোগ্যভাবে, আইজ্যাকম্যান একসময় মাস্কের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। ট্রাম্প তাঁকে নাসার প্রধান হিসেবে মনোনীত করেছিলেন, কিন্তু মাস্কের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙনের সময় সেই মনোনয়ন বাতিল করা হয়। পরে ট্রাম্প দাবি করেন, এই ঘটনাই মাস্ককে বিরক্ত করেছে।
এদিকে, রিপাবলিকানদের ভেতরে এই বৈঠককে ঘিরে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। রিপাবলিকান সেনেটর জশ হাওলে সেদিনই এক বক্তৃতায় এআই ইন্ডাস্ট্রির কড়া সমালোচনা করেন। তিনি মেটা ও চ্যাটজিপিটির মতো টেক জায়ান্টদের নিয়ন্ত্রণে সরকারি হস্তক্ষেপের দাবি তোলেন। অন্যদিকে, ট্রাম্প নিজে নিয়মিত এআই-নির্মিত ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন। যদিও গত সপ্তাহেই তিনি অভিযোগ করেন, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর ভিডিও তৈরি হচ্ছে। এক ভিডিও নিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, “যদি সত্যিই কোনও বড় বিপদ ঘটে, হয়তো আমাকে দোষটা এআই-এর ঘাড়েই চাপাতে হবে।”
টাস্ক ফোর্স বৈঠকে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পও এআই প্রযুক্তির সম্ভাবনা ও ঝুঁকি — দুই দিকই তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “এই প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের দায়িত্ব এআই-কে নিজের সন্তানের মতো সামলানো — শক্তি দেওয়া, কিন্তু সতর্ক দৃষ্টিতে।” সম্প্রতি মেলানিয়া সারা দেশে স্কুল ছাত্রছাত্রীদের জন্য এআই ব্যবহার করে কমিউনিটি প্রকল্প তৈরির প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন। পাশাপাশি, তিনি এআই-এর অপব্যবহার, বিশেষত অনলাইনে ডিপফেক ও যৌন শোষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নেরও দাবি জানান।
