হয় না চিন্ময়ী মায়ের রূপের দর্শন, জীবিত উমাদের ঠাঁই নেই পুজো মন্ডপে

হয় না চিন্ময়ী মায়ের রূপের দর্শন, জীবিত উমাদের ঠাঁই নেই পুজো মন্ডপে

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

হয় না চিন্ময়ী মায়ের রূপের দর্শন, জীবিত উমাদের ঠাঁই নেই পুজো মন্ডপে। আশ্বিন মাস পড়লেই শরতের তুলোর মতো মেঘ আর কাশফুলের সমারোহ দেখলেই বাঙালির মনের ভিতরটা আনন্দে ভোরে ওঠে। এবার আসবেন ‘দেবী উমা’। তার আরাধনাতে মেতে ওঠে আপামর বাঙালী সমাজ। দেবী উমার ‘মৃন্ময়ী রূপ’-র আরাধনার মাধ্যমে প্রতিটি বাঙালী প্রত্যক্ষ করতে চায় মায়ের ‘চিন্ময়ী রুপ’-কে।

 

স্বপরিবার নিয়ে প্রতিবছর আশ্বিনে দেবীর মর্তে আগমন। দেবীকে মাতৃজ্ঞানে আরাধনা করে ধন্য হয়ে ওঠে বাঙালী সমাজ। যদিও একইভাবে এই অশ্বিনের দেবী আরাধনার মধ্যেই ব্রাত্য হয়ে থাকে অনেক রক্ত মাংসের জীবিত উমা। যারা তাদের সারা জীবনটা সংসার প্রতিপালনে বিসর্জন দিয়েছেন। মায়ের স্নেহে, মমতায়, যত্নে, তিল তিল করে মানুষ করার চেষ্টা করেছেন সন্তানদের। তবুও উচ্চ শিক্ষিত হয়ে সেই সন্তানরাই বিসর্জন দিয়েছেন এই জীবিত থাকা দেবী উমাদের। আর সেই সন্তানরা!

 

আশ্বিনে দেবীর মৃন্ময়ী রূপের আরাধনাতে ব্রতী হয়ে রয়েছে। সন্তান বিসর্জন দিলেও মায়ের মনের টান আজও প্রখরভাবেই বিদ্যমান এই মায়েদের মনে। তাই কথায় কথায় আজও চোখের কোনে চলে আসে জল। ঠোঁটে অভিমানের শব্দ এলেও মনের ভেতরটা একেবারেই শূন্য। তবুও এই শূন্যতার মধ্যে জীবনের অনেক অপূর্ণতাকে নিয়েই জীবনের শেষের দিনগুলো কাটছে ‘আনন্দম’ বৃদ্ধাবাসে। এখানকার আবাসিকরাই এখন সকলে সকলের একান্ত পরিবার। তাই সচেতনভাবেই নিজেদের পরিবার সন্তান সন্তুতিকে ভুলেই হাতে পাওয়া চোদ্দ আনা দিয়েই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছেন।

 

বৃদ্ধাশ্রমের কর্মী অর্চনা চক্রবর্তী জানান, এটাই এখন তাঁদের সংসার। এই বৃদ্ধ মানুষদের নিয়ে তাঁদের সারাদিন কিভাবে কেটে যায় তাঁরা বুঝতেও পারেন না। এরাই এখন তাঁদের আত্মীয়, বাবা, মা সব। তিনি আরও বলেন, এখানে ৪২ জন বয়স্কা মহিলারা আছেন। তাঁদেরকে এখানে দিয়ে যাওয়ার পরে তাঁদের ৭০% পরিবারের লোক আর তাঁদের খোঁজ রাখেন না। এই বৃদ্ধাশ্রমের পরপথম আবাসিক কণিকা দাস জানান, তিনি এখানে যখন এসেছিলেন তখন একটা টালির চালের কুঁড়ে ঘর ছিল। এখন বৃদ্ধাশ্রম হয়েছে। ছেলে বৌয়ের অত্যাচারে তিনি এখানে আসতে বাধ্য হয়েছেন। শুরুতে নিজেই রেঁধে খেতেন। তাতে খুব শান্তি ছিল।

 

এখনও মনে পরে তার বাপের বাড়ির দুর্গাপুজোর কথা। পুজো এলেই বাবা মায়ের সঙ্গে বাড়ির পুজো আয়োজনের কথা। তবে স্বামীর থেকে যে প্রেম ভালোবাসা যত্ন পেয়েছেন, তা কখনও আর কারোর কাছে পান নি তিনি। তাই একাকিত্ব লাগলেই স্বামীর কথা মনে পরে তার। বই পড়ার নেশাতে নিজেকে ডুবিয়ে রাখেন। ছেলের সঙ্গে নারীর টান আজও, তা ভুলতে পারছেন না বছর আশির কণিকা দেবী।

আরও পড়ুন – জেলার দাবিতে বিডিওর মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান

ছেলে যখন মা বলে ডাকতো, তা শুনতে খুব মধুর লাগতো, এই বলেই চোখের কোনটা চিকচিক করে ওঠে অভিমানী জলে। তবে, এখানে এসে খুবই শান্তিতে এবং ভালো আছেন বলে জানান তিনি। শুধু পরিবারের সদস্যদের থেকে লাঞ্চিত হয়ে এখানে আসা তা ঠিক নয় বলে জানান নয় মাস আগে এখানে আসা বছর সত্তরের শিপ্রা চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, স্বামী অনেকদিন আগেই মারা গেছেন। নয় মাস আগে তার একমাত্র কন্যা বছর চুয়াল্লিশের তার মৃত্যু হয়।

 

এরপর থেকে একা ফ্ল্যাটে থাকতে একাকিত্ব গ্রাস করেছিল তাঁকে। তাই এখানে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তবে এখানে এসে থাকতে পারবেন কিনা সেই বিষয়ে সন্দেহ নিয়েই এসেছিলেন। কিন্তু, এখন আর ফেরত যেতে মন চায় না। এখানের অন্যান্য আবাসিকদের সঙ্গে আত্মীয়তা, সাহচর্যে তিনি একাকিত্বকে পাশ কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন বলে জানান শিপ্রা দেবী। তবে, এই রক্তমাংসের উমাদের দেখে মনে হয়, আমাদের তৈরী সভ্যতার দিকে তারা আঙ্গুল তুলে বলছেন, “আজও আমরা দেবী মায়ের মৃন্ময়ী রুপ থেকে উত্তরণ করতে পারলাম না মায়ের চিন্ময়ী রুপ দর্শন করতে”।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top