দূর্গাপুজো – রাজা নেই, নেই রাজত্বও। তবু টিকে আছে ১০২৯ বছরের প্রাচীন রীতি। বিষ্ণুপুর মল্ল রাজবাড়িতে কৃষ্ণা নবমীর দিন মুহুর্মুহু কামান গর্জনের মধ্যে দিয়ে শুরু হল রাজকূলদেবী মৃন্ময়ীর পুজো। ভোরে মাধব সায়ের পুকুরে মহাস্নান পর্ব সেরে বাদ্যযন্ত্র সহযোগে শোভাযাত্রায় আনা হয় বড় ঠাকুরানীর পট। মন্দির চত্বরে প্রবেশের সময় তিন দফায় তোপধ্বনী হয়, এরপর পানপাতায় পা রেখে দেবী প্রবেশ করেন মূল মন্দিরে।
মল্ল রাজ পরিবারের নিজস্ব বলীনারায়ণী পুঁথি অনুযায়ী চলে এই পুজো। কৃষ্ণা নবমীতে মহাকালী রূপে আসেন বড় ঠাকুরানী, মান চতুর্থীতে মহা সরস্বতী রূপে মেজ ঠাকুরানী ও ষষ্ঠীতে মহা লক্ষ্মী রূপে ছোট ঠাকুরানী। অষ্টমী-নবমীর রাতে হয় মহামারী প্রতিরোধের বিশেষ পুজো। অতীতে শাক্ত মতে নরবলির প্রচলন থাকলেও, বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষার পর মল্ল পরিবার সেই প্রথা বন্ধ করে কেবল তোপধ্বনীকেই পুজোর প্রতীক বানায়।
ইতিহাস বলছে, ৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে বনবীথির বটতলায় দৈব নির্দেশে রাজা জগৎমল্ল প্রতিষ্ঠা করেন মৃন্ময়ীর মন্দির। সেখান থেকেই শুরু এই রাজকীয় পুজোর ঐতিহ্য। রাজত্ব হারালেও রাজপরিবারের নিষ্ঠা ও বিষ্ণুপুরবাসীর আবেগে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি। তাই আজও মৃন্ময়ীর তোপধ্বনিই বিষ্ণুপুরে দুর্গোৎসবের সূচনার ঘোষণাস্বরূপ ধ্বনিত হয়।
