১৪ বছর ধরে হিংস্র বন্যপ্রাণীদের সাথে ঘরসংসার করছেন রেলের দুই “টারজান”। দুজনেই পরিচিত টারজান নামে।দুজনেই রেলের সহকর্মী। কেন টারজান নামে পরিচিত? দুজনেই দিনরাত ২৪ ঘন্টা হাতি, বাইসন, চিতাবাঘ,বিষধর সাপ, হরিণের পাল, বুনো শূয়রের সাথেই কাটিয়ে দেন আলিপুরদুয়ার রেল ডিভিশনের এই দুই গেটম্যান।স্থানীয় বাসিন্দা সহ রেলের অনেক কর্মী এই দুই গেটম্যানকে তাই “রেলের টারজান” বলে ডেকে থাকেন।একজনকে ডাকা হয় সিনিয়ার টারজান তো অপর জনের নাম জুনিয়র টারজান।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের রেলের এই দুই টারজান তথা দুই গেটম্যানের দেখা পেতে হলে যেতে হবে বক্সা টাইগার রিজার্ভের বুক চিরে চলে যাওয়া এসকে-১২৬ নম্বর শিকারী গেটে।
রাজাভাতখাওয়া রেল স্টেশন থেকে জঙ্গলের পথ ধরে হাঁটা পথে নয়তো রাজাভাতখাওয়া থেকে সড়ক পথে গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ডিমা সেতু হয়ে কালচিনি যাবার পথে ঘন জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে এই শিকারী রেলগেট।
২০০৯ সাল থেকেই এই শিকারী গেটে জঙ্গলী প্রাণীদের সাথেই রেলের গেটম্যানের কাজ করছেন দিলীপ কুমার দাস এবং নবকান্ত নাথ। দিনে পালা করে দুই গেটম্যান এই গেটে কাজ করছেন। বক্সার কোর এলাকায় থাকা এই শিকারী রেলগেট থেকে জনবসতি প্রায় চার কিলোমিটার দূরে।রেলগেটের আশেপাশে নেই কোন বনবস্তি।
এই রেলগেট থেকে সবচেয়ে কাছের জনবসতি রাজাভাতখাওয়া। অন্যদিকে কালচিনির দুরত্ব প্রায় নয় কিলোমিটার।
আরও পড়ুন – ইউক্রেনজুড়ে নতুন করে মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করল রাশিয়া
দিনে দুপুরেই বক্সার কোর এলাকার এই রেলগেটে হাতি, বাইসন, বুনো শূয়র, হরিণের পাল ঘুরে বেড়ায়।
মাঝেমধ্যে হাতির দল গেটম্যানদের জন্য তৈরি ছোট্ট পাকা ঘরটির মধ্যে চলে এলেও এখনও পর্যন্ত তারা দুই গেটম্যানকে কোন ক্ষতি করেনি।শীত গ্রীষ্ম, বর্ষা দিব্যি এই দুই গেটম্যান কোর এলাকার জঙ্গলে নির্ভয়ে পায়চারী করে ঘুরে বেড়ান।যেখানে বনদপ্তরের কর্মীরা এই এলাকায় আসতে ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে সেখানে এই দুই গেটম্যানের সাথে অজান্তেই যেন নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বন্যপ্রাণীদের।
আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা দিলীপ কুমার দাস তথা সিনিয়ার টারজান বলেন “দিনরাত ২৪ ঘন্টাই এখানে হাতি, বাইসন, বুনো শূয়র, হরিণ, চিতাবাঘ ঘুরে বেড়ায়”।তবে কোনও দিন আমাদের কোন ক্ষতি করেনি এই জঙ্গলী প্রাণী গুলো।ওদের জন্য মাঝে মধ্যেই আমরা পানীয়জল আমাদের রেল ঘুমটির মধ্যে রেখে দিই। ওরা এসে সেই জল পান করে।ওদের সাথে দিব্যি ভালো আছি।শহরের জটিল মানুষদের থেকে অবলা এই প্রাণী গুলো অনেক ভালো।ওদের সাথেই ভালো আছি।
নবকান্ত নাথ তথা জুনিয়র টারজান বলেন এরা কোনও ক্ষতি করেনা।এখানে প্রায় ১৩ বছর ধরে রয়েছি।ওদের সাথে একটা বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। কোন রাতে হাতির পাল না এলে মনটা খারাপ হয়ে যায়।ভাবি ওরা হয়ত অন্য কোথাও চলে গেছে।দিনে অন্তত একবার ওদের না দেখলে খুব খারাপ লাগে।