২০১৭ সালের বন্যা ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে ফের নয়া মোড়

২০১৭ সালের বন্যা ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে ফের নয়া মোড়

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

২০১৭ সালের বন্যা ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে ফের নয়া মোড়, অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ এবং তার স্বামী, গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ বিজেপির, ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত কি করে ব্লক নেতৃত্বের পদে প্রশ্ন শাসকদলের অভ্যন্তরে, সাফাই জেলা তৃণমূলের, তীব্র খোঁচা কংগ্রেসের, শুরু তরজা
২০১৭ সালের মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের বন্যা ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে চাঞ্চল্যকর মোড়।

 

এবার এই ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা বর্তমান পূর্ত কর্মাদক্ষ জয়শ্রী কর্মকার এবং তার স্বামী বাপি পাল কে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে এই দাবিতে এদিন হরিশ্চন্দ্রপুর কুশিদা বাসস্ট্যান্ডে বিক্ষোভ দেখালো হরিশচন্দ্রপুর বিজেপি নেতৃত্ব।

 

তাদের দাবি ২০১৭ সালের বন্যায় ক্ষতি-গ্রস্তদের টাকা ব্যাপক ভাবে নয়-ছয় করে ছিলেন তৃণমূলের নেত্রী তথা হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির তৎকালীন সভাপতি জয়শ্রী কর্মকার। পাশাপাশি একই অভিযোগ হয়েছিল বর্তমান সভাপতি কোয়েল দাস, পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দল-নেত্রী তথা বর্তমান তৃণমূল নেত্রী সুজাতা সাহা, ত্রাণ কর্মাধ্যক্ষ রোশনারা খাতুনের বিরুদ্ধে। এই নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের বিডিও অনির্বাণ বসু হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এবং কোর্টে মামলা দায়েরও করা হয়।

আরও পড়ুন – গণেশ চতুর্থীর দিন ভুলেও করবেন না এই কাজ, জীবনে নেমে আসবে চরম দুর্দশা

অভিযোগের পরি-প্রেক্ষিতে রোশনারা খাতুনের জেল হয় অন্যদিকে কোয়েল দাস এবং সুজাতা সাহা, কোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন। কিন্তু রহস্য জনক ভাবে জয়শ্রী কর্মকার এবং তার স্বামী বাপি পালের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয় এবং হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার তো দূরের কথা প্রশাসনিক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নি বলে অভিযোগ বিজেপির। অন্যদিকে দেখা যায় সম্প্রতি শাসক দলের ব্লক কমিটির তালিকা প্রকাশ হলে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের তিনটা অঞ্চলের মহিলা সভাপতি হিসাবে নাম ঘোষণা করা হয়েছে অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা জয়শ্রী কর্মকারের।

 

আর এই ঘটনার পরে রবিবার হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার কুশিদা বাস-স্ট্যান্ডে হরিশ্চন্দ্রপুরের বিজেপির নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তাদের দাবি অবিলম্বে অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা তৃণমূল নেত্রী জয়শ্রী কর্মকার ও তার স্বামী বাপি পাল কে গ্রেফতার করতে হবে। না হলে থানা ঘেরাও সহ বৃহত্তর আন্দোলনের সামিল হবে জেলা বিজেপি। যদিও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি হরিশ্চন্দ্রপুর পুলিশ প্রশাসন। গোটা ঘটনায় শুরু হয়েছে তৃণমূল ও বিরোধীদের রাজনৈতিক চাপানোতর।

 

প্রসঙ্গত ২০১৭ সালের বন্যায় ব্যাপক ভাবে ক্ষতি-গ্রস্ত হয়েছিল হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর এলাকার কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের একাংশ। ২০১৯ সালে প্রথম দিকে ক্ষতি-গ্রস্তদের জন্য হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকে ১৬ কোটি টাকা ঢোকে। কিন্তু অভিযোগ ওঠে প্রকৃত ক্ষতি-গ্রস্তদের একাউন্টে এই টাকা না ঢুকে শাসকদলের জন-প্রতিনিধি এবং তাদের ঘনিষ্ঠদের একাউন্টে একাধিক বার ক্ষতি-পূরণের টাকা ঢোকানো হয়।

 

এই নিয়ে বিডিও হরিশ্চন্দ্রপুর ১ অনির্বাণ বসু হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্ত হয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কোয়েল দাস, পূর্ত কর্মাদক্ষ জয়শ্রী কর্মকার, ত্রাণ কর্মাধ্যক্ষ রোশনারা খাতুন এবং বিরোধী দল-নেত্রী তথা বর্তমান তৃণমূল নেত্রী সুজাতা সাহার বিরুদ্ধে। অভিযোগের পরি-প্রেক্ষিতে রোশনারা খাতুন কে গ্রেফতার করে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ অন্যদিকে সুজাতা সাহা এবং কোয়েল দাস কোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন।

 

সূত্রের খবর সেই সময় পুলিশ আধিকারিকদের জেরার মুখে বিডিও অনির্বাণ বসু সরাসরি এই দুর্নীতির পিছনে জয়শ্রী কর্মকার এবং তার স্বামী বাপি পালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তারপরেই তাদের দুজনের বিরুদ্ধে। সেই বন্যা ত্রাণ মামলায় তাদের নাম ঢোকে। একই অভিযোগে অভিযুক্ত যদিও বিরোধীদের অভিযোগ পুলিশ প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। জেরার মুখে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যায় কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের পালপাড়া এবং রক্ষিত পাড়া এলাকায় একাধিক পরিবারের একাউন্টে ৭০ হাজার টাকা করে ঢোকানো হয়েছিল কিন্তু সেই এলাকায় বন্যার জল প্রবেশই করেনি।

 

এলাকার মিঠুন রক্ষিত নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে জয়শ্রী কর্মকার এবং বাপি পাল এই টাকা লেনদেন করে। পুলিশি জেরার মুখে মিঠুন রক্ষিত সমস্তটাই স্বীকার করে বলে সূত্রের খবর। এমনকি জয়শ্রী কর্মকার এবং তার স্বামীর যোগসাজশে ৮৬ জন ভুয়ো বেনেফিশিয়ারির একাউন্টে টাকা ঢোকানো হয়েছিল। এই বিষয়ে ২০১৯ সালে বিরোধী দল-নেত্রী তথা বর্তমান তৃণমূল নেত্রী সুজাতা সাহা একাধিক বার বন্যা ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে ব্লক প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনকে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানালেও কোন ফল হয়নি।

 

এমনকি ক্ষতি-গ্রস্তদের তালিকায় তার সই জাল করা হয়েছে বলেও তিনি একাধিক বার দাবি তুলেছিলেন। এমনকি অভিযোগের তীর জয়শ্রী কর্মকারের দিকেও তোলা হয়েছিল সুজাতা সাহার দিক থেকে। তবুও জয়শ্রী কর্মকারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি পুলিশ প্রশাসন।যদিও জয়শ্রী কর্মকার গ্রেফতারি নিয়ে মুখে কুলুপ এটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর পুলিশ প্রশাসন।

যদিও জয়শ্রী কর্মকার ও তার স্বামী বাপি পালকে প্রশ্ন করা হলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি।

 

এদিকে এ বিষয়ে এখনই কোন মন্তব্য করতে নারাজ তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। জেলা মুখপাত্র শুভময় বসু জানান সমস্ত ঘটনা না জেনে কোন মন্তব্য করব না। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, দোষী প্রমাণ হলে আইন এবং দল অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

অন্যদিকে বিজেপির উত্তর মালদার সাংগঠনিক সম্পাদক রূপেশ আগরওয়াল জানান ২০১৭ বন্যা ত্রাণ কেলেঙ্কারি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে।আর দুর্নীতির মূল নায়ক জয়শ্রী কর্মকার প্রকাশ্য দিবালোকে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। জয়শ্রী কর্মকার এবং তার স্বামীর বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আমরা থানা ঘেরাও করব।

 

অন্যদিকে এলাকার কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক মোস্তাক আলম জানান ২০১৭ সালের বন্যা ত্রাণ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক ভাবে দুর্নীতি করেছে শাসকদল। এই নিয়ে আমি একাধিক মামলা দায়ের করেছি। আমাকে বিভিন্ন সময় হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। কিন্তু আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা শাসকদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন পঞ্চায়েত দুর্নীতিতে যে সমস্ত জন-প্রতিনিধিরা যুক্ত থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করবে জেলা প্রশাসন।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top