রাজ্য – রোদ ঝলমলে আকাশে দিন কাটছে আপাত স্বস্তিতে, তবে সেই আরাম বেশিক্ষণ টিকবে না। ভোরে হালকা শিরশিরানি থাকলেও, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চড়া রোদে অস্বস্তি বেড়েছে। তবে এই অস্বস্তি মিলিয়ে যেতে আর মাত্র ২৪ ঘণ্টা বাকি। শুক্রবার থেকেই উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে শুরু হবে বৃষ্টি। প্রাথমিকভাবে কয়েকটি জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাত হলেও, পরবর্তী কয়েকদিনে গোটা রাজ্যই ভিজবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
মৌসম ভবনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, উৎসবের আমেজ কাটতেই ফের দুর্যোগের ইঙ্গিত মিলেছে। আগামী সোমবার পর্যন্ত টানা চারদিন বাংলায় বজ্র-বিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের উপরে একটি সুষ্পষ্ট নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি হয়। সেটি ধীরে ধীরে পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বুধবার সেই নিম্নচাপ শক্তি সঞ্চয় করে দক্ষিণ-পশ্চিম ও সংলগ্ন মধ্য-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
এই নিম্নচাপের গতিপথ তামিলনাড়ু, পুদুচেরি এবং দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলের দিকে থাকবে বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন। বৃহস্পতিবারের মধ্যে এটি আরও শক্তিশালী হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এর প্রভাবে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলায় অবশ্য তেমন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে টানা হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে আগামী সপ্তাহের শুরু পর্যন্ত। আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গের আকাশ থাকবে পরিষ্কার। রোদ ঝলমলে আবহাওয়া বজায় থাকবে সমস্ত জেলাজুড়ে, তবে তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
আগামীকাল শুক্রবার থেকে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি শুরু হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। সেদিন উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, এবং ঝাড়গ্রামে বিক্ষিপ্ত হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
যদিও আপাতত কোনও সতর্কতা জারি হয়নি, কারণ বৃষ্টি হবে ছিটেফোঁটা ও স্বল্পমাত্রায়। শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই বৃষ্টি অস্বস্তি কমিয়ে এনে কিছুটা স্বস্তি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গেও ধীরে ধীরে বাড়বে বৃষ্টির প্রভাব। আজ বৃহস্পতিবার সেখানে আকাশ পরিষ্কার থাকবে, বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে শুক্রবার দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
শনিবার ও রবিবারও দার্জিলিং, কালিম্পং এবং জলপাইগুড়িতে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে। সোমবার থেকে উত্তরবঙ্গের আটটি জেলাতেই হালকা বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও সতর্কতা জারি করা হয়নি, আবহাওয়াবিদদের মতে, নিম্নচাপের গতিপথের ওপর নির্ভর করবে বৃষ্টির তীব্রতা ও সময়কাল।
এই সময় কৃষকদের জন্য আবহাওয়া দফতরের পরামর্শ—আগামী কয়েকদিন মাঠে রাখা ফসল ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, কারণ বৃষ্টির ফলে কিছু এলাকায় জল জমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
একইসঙ্গে নাগরিকদেরও অনুরোধ করা হয়েছে, শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত অপ্রয়োজনে বাইরে না বেরোতে এবং জলবদ্ধ এলাকায় সাবধানতা অবলম্বন করতে।
মৌসম ভবন জানিয়েছে, নিম্নচাপের প্রভাবে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়বে, ফলে দক্ষিণবঙ্গে দিন ও রাতের তাপমাত্রায় সামান্য পতন ঘটবে।
বৃষ্টি শুরু হলে আংশিকভাবে প্রশমিত হবে বায়ুদূষণের মাত্রাও। ফলে কিছুটা স্বস্তি ফিরবে শহরবাসীর জীবনে।
সব মিলিয়ে, উৎসব-পরবর্তী বাংলায় ফের নামতে চলেছে বৃষ্টি, এবং টানা চারদিনের ভেজা আবহেই কাটবে রাজ্যের দিনরাত।
