ভাঙড়ে মাথায় গুলি লেগে মৃত্যু আইএসএফ কর্মীর, জখম দুই তৃণমূল কর্মী, তৃণমূল এবং ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর বোমা এবং গুলির লড়াইয়ে আবার অশান্ত হয়ে উঠল ভাঙড়। তার জেরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হল এক আইএসএফ কর্মীর। সংঘর্ষের জেরে জখম হয়েছেন দুই তৃণমূল কর্মীও। এমনটাই দাবি যুযুধান দুই পক্ষের। ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী। ভাঙড়ে অশান্তি নিয়ে আইএসএফকেই দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার আগে থেকেই রাজ্যের শাসকদল এবং আইএসএফের মধ্যে উত্তেজনা জারি রয়েছে। মাঝেমাঝেই দু’পক্ষের মধ্যে বেধেছে মারপিট। তবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গত মঙ্গলবার ভাঙড়-২ ব্লকের বিজয়গঞ্জ বাজার এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। এলাকায় যথেচ্ছ বোমাবাজি এবং গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। তার জেরে আহতও হন কয়েক জন। এই পরিস্থিতিতে বুধবারও উত্তেজনা ছিল এলাকায়। তবে তা মঙ্গলবারের মতো আকার ধারণ করেনি। বৃহস্পতিবার আবার সেই আশঙ্কা মাথাচাড়া দিচ্ছে। প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসনও। বাসন্তী হাইওয়ে জুড়ে মোতায়েন পুলিশ। এ ছাড়া রয়েছে টহলদারি ভ্যানও। বাসন্তী হাইওয়ে থেকে যে সব রাস্তা বিভিন্ন গ্রামে ঢুকছে সেখানেও রয়েছে বাহিনী। এ জন্য অতিরিক্ত বাহিনীও আনা হয়েছে।
আরও পড়ুন – ফের উত্তপ্ত দিনহাটা ,মনোনয়ন দিতে যাওয়ার পথে বিজেপি প্রার্থীদের ‘মার’, গাড়ি ‘ভাঙচুর’
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে বুধবার যে অশান্তির ছবি দেখা গিয়েছিল ভাঙড়ে তা ফিরে এল বৃহস্পতিবারও। আবার রণক্ষেত্র হয়ে উঠল ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার। সেখানকার কাঁঠালিয়া মোড়ে তৃণমূল এবং আইএসএফের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। মুড়িমুড়কির মতো বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে গুলি চালানোরও। তার জেরে মৃত্যু হয়েছে মহম্মদ মহিদ্দিন মোল্লা নামে এক আইএসএফ কর্মীর। এমনটাই দাবি আইএসএফ নেতৃত্বের। ওই সংঘর্ষের পর বিজয়গঞ্জ বাজারে আগুন ধরিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে এলাকায় মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। চলছে পুলিশি টহলদারিও। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে প্রথম থেকেই থমথমে পরিস্থিতি ছিল ভাঙড়ে। ভাঙড়ের দু’টি বিডিও অফিস চত্বরেই জড়ো হন তৃণমূল এবং আইএসএফ-এর কর্মীরা। এর পরেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।
নিয়ম মতো সকাল ১১টা থেকে শুরু হয় মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া। প্রস্তুত ছিল প্রশাসনও। ভাঙড়-১ এবং ভাঙড়-২ এই দুই বিডিও অফিসের বাইরে এক কিলোমিটার পর্যন্ত মুড়ে ফেলা হয় নিরাপত্তার চাদরে। তবে গত দু’দিন ধরে তৃণমূল এবং আইএসএফের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে বৃহস্পতিবারও থমথমে এলাকার পরিস্থিতি। আবার দু’পক্ষের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা করছিলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। এই আবহে দুই পক্ষের কর্মীদেরই দেখা গিয়েছে বিভিন্ন এলাকায় জড়ো হয়ে থাকতে। তাঁদের হাতে দেখা গিয়েছে লাঠিসোঁটাও। আর তা নিয়েই চড়তে শুরু করে উত্তেজনার পারদ। ভাঙড়-১ বিডিওতে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার সময় সিপিএম কর্মী-সমর্থকরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের বাধা দিয়েছে তৃণমূল। যদিও সিপিএমের তোলা সমস্ত অভিযোগ ভুয়ো বলে উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। আবার ভাঙড়-২ ব্লকে সিপিএম অভিযোগ করেছে, মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার পথে তাঁদের প্রার্থী গিয়াসুদ্দিন মোল্লার কাগজপত্র ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। বামেদের অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শাসকদল সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।