ভারতে জি২০ সম্মেলনে ‘না’ কিন্তু চিন সফরে যাচ্ছেন ভ্লাদিমির পুতিন, অক্টোবরে চিন সফরে যাচ্ছেন ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামে’র বৈঠকে যোগ দিতে সম্মত হয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন তিনি। পুতিনের এই সফরের জন্য মস্কোতে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রসঙ্গত, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গত মার্চ মাসে পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। তার পর এই প্রথম বিদেশ সফর করতে চলেছেন তিনি। চিন সফরে রাজি হলেও, ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর, নয়া দিল্লিতে আয়োজিত জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না তিনি। সোমবার (২৮ অগস্ট) এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বদলে সম্মেলনে যোগ দেবেন রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। ভারতে আসছেন না, অথচ চিনে যাচ্ছেন কেন রুশ প্রেসিডেন্ট?
রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই যুক্তি দেওয়া হলেও, অনেকেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানাই, পুতিনের ভারতে না আসার প্রধান কারণ। গত মার্চ মাসে হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, ইউক্রেনীয় শিশুদের অপহরণ-সহ বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধের জন্য পুতিনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। তারপর থেকে আর রাশিয়ার সীমানা অতিক্রম করেননি রুশ প্রেসিডেন্ট। ২০২২-এর ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে, পুতিন শুধুমাত্র সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কয়েকটি দেশ এবং ইরানে পা রেখেছেন। অগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনেও সশরীরে যোগ দেননি তিনি। ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দিয়েছিলেন।
বস্তুত, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম সংবিধিতে যে ১২৩টি দেশ স্বাক্ষর রয়েছে, সেই দেশগুলি যা আন্তর্জাতিক আদালতের আদেশ মানতে বাধ্য। ফলে, এই দেশগুলিতে পা রাখলেই গ্রেফতার হতে হবে পুতিনকে। দক্ষিণ আফ্রিকা এই সংবিধিতে সাক্ষরকারী। তবে, চিনের মতো ভারতও রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী নয়। তাহলে ভারতে আসতে কোথায় অসুবিধা পুতিনের?
ক্রেমলিনের এক সূত্র উল্লেখ করে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে যে দেশে তাঁর নিরাপত্তা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত বলে মনে করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট বর্তমানে শুধুমাত্র সেই দেশগুলিতেই যাবেন। চিন সেই রকম এক জায়গা। দ্বিতীয়ত, পুতিন নয়া দিল্লিতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিলে, শীর্ষ সম্মেলনের যাবতীয় মনোযোগ ইউক্রেন যুদ্ধের উপরই চলে যেত। অন্যান্য আলোচ্য বিষয় পিছনের সারিতে চলে যেত। জি২০ শীর্ষ সম্মেলনকে, ইউক্রেন যুদ্ধ বিরোধী মঞ্চে পরিণত করতে চান না পুতিন।
আরও পড়ুন – উড়ান শুরুর মাত্র ২০ মিনিটের মধ্য়েই বিমানের ইঞ্জিন বিকল
গত জুলাই মাসেই ক্রেমলিনের বৈদেশিক নীতি বিভাগের কর্তা ইউরি উশাকভ জানিয়েছিলেন, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামে’র বৈঠকের জন্য চিন সফরের পরিকল্পনা করছেন পুতিন। রুশ নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি নিকোলাই পাত্রুশেভ জানিয়েছিলেন, পুতিনকে সম্মেলনের ‘প্রধান অতিথি’ হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে চিন। সম্প্রতি ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে ক্রেমলিনের কয়েকটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। পুতিনের চিন সফরের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে ক্রেমলিন। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, “শীর্ষ স্তর-সহ বিভিন্ন স্তরে রুশ-চিন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সময়সূচী তৈরি করা হচ্ছে। আমরা সময়মত এই বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করব।”
অথচ, প্রায় একই সময়ে আয়োজিত নয়া দিল্লি জি২০ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না পুতিন। কেন তিনি নয়া দিল্লিতে নিজে না এসে বিদেশমন্ত্রীকে পাঠাচ্ছেন? পুতিন জানিয়েছেন, তাঁর ‘ব্যস্ত সময়সূচি’ রয়েছে। তাছাড়া, এখনও তাঁর সমস্ত মনোযোগ ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের উপরেই রয়েছে। তাই তিনি জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে পারছেন না।