সম্পর্ক ক্রমে তলানিতে। খলিস্তানি বিতর্কে কানাডার বিরুদ্ধে এবার কড়া পদক্ষেপ ভারতের। দিল্লিকে কর্মরত কানাডার এক পদস্থ কূটনীতিককে ভারত ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিল ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রক। দিল্লিতে কর্মরত কানাডার রাষ্ট্রদূত ক্যামেরন ডিন ম্যাকিকে মঙ্গলবার দিল্লির বিদেশ মন্ত্রকে ডেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয় ভারতের তরফ থেকে।
আরও পড়ুনঃ নিজ্জারের মৃত্যুতে ভারতযোগ, দাবি কানাডার, পাল্টা ভারত
সূত্রের দাবি তাকে বলা হয়েছে, ওই কূটনীতিককে পাঁচদিনের মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে। ভারত সরকার ওই কূটনীতিকের নাম প্রকাশ করেনি। সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, ওই কূটনীতিক ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছিলেন। তিনি ভারত বিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত।
ভারতের সিদ্ধান্তের কী জবাব দেয় কানাডা এখন সেটাই দেখার। সাধারণত, কূটনীতিক বা রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেই পাল্টা জবাব দেওয়া হয়ে থাকে। দু-দেশের সম্পর্কের অবনতি নিয়ে বিগত কয়েক মাস ধরেই জল্পনা চলছিল। কানাডায় খলিস্তানিদের ভারত বিরোধী কার্যকলাপ নিয়ে নয়াদিল্লির উদ্বেগ, অসন্তোষকে জাস্টিন ট্রুডোর সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে দিল্লির বিদেশ মন্ত্রক অনেকদিন ধরেই কূটনৈতিক চ্যানেলে জানিয়ে আসছিল। কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এমন কিছু ঘটনা ঘটিয়েছে যা সে দেশের প্রশাসনের উচ্চতম মহলের প্রশ্রয় না থাকলে সম্ভব নয়।
দু সপ্তাহ আগে জি ২০-র (g20 summit 2023) সদস্য কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো দিল্লি এলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় তাঁকে খলিস্তানিদের ভারত বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানান। কানাডায় এইসব ঘটনা কীভাবে ঘটতে পারছে, সেই প্রশ্ন তুলে ট্রুডোকে অস্বস্তির মধ্যে ফেলেন প্রধানমন্ত্রী। মোদী প্রকারান্তরে বলেই দেন, কানাডা সরকারের মদত ছাড়া এমনটা হওয়ার কথা নয়।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর পরই সাংবাদিক বৈঠকে ট্রুডো সাংবাদিক সম্মেলনে খলিস্তানি আন্দোলনকে তাঁর দেশে বসবাসকারী শিখদের বাক্ স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার বলে উল্লেখ করে ভারতের উদ্বেগকে একেবারে গুরুত্বই দিতে চাননি। ট্রুডোর ওই মন্তব্য ভালভাবে নেয়নি মোদী সরকার।
দিল্লিতে জি ২০ সম্মেলন চলাকালেই বোঝা গিয়েছিল জল অনেক দূর গড়াতে পারে। বাস্তবে তাই হচ্ছে। দেশে ফিরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা সরব হয়েছেন। দেশের সংসদে ভারতের বিরুদ্ধেই কানাডায় হিংসায় মদত দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি। তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রীও তাতে গলা মিলিয়েছেন। ট্রুডোর অভিযোগ, কানাডায় ঘটে যাওয়া অশান্তির পিছনে ভারতের হাত আছে।
এই অভিযোগে বেজায় ক্ষুব্ধ ভারত। কূটনৈতিক ভাষাতেই জবাব দিয়েছে নয়া দিল্লি। নরেন্দ্র মোদী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র অরিন্দম বাগচির কথায়, কানাডার প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি খলিস্তানিদের মদত দেওয়ার অভিযোগ থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই এমন অযৌক্তিক কথা বলছেন।
ট্রুডোকে নিয়ে ভারত-কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্কের ঠান্ডা লড়াই অনেক দূর গড়াতে পারে, দিল্লিতে জি ২০ সম্মেলন চলাকালেই তা টের পাওয়া যায়। কানাডায় খলিস্তানিরা দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয়। পাঞ্জাবকে স্বাধীন দেশ বা রাষ্ট্র ঘোষণার দাবিতে বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে তারা ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কানাডা হল খলিস্তানিদের আসল ঘাঁটি। ভারতের পর ওই দেশেই শিখরা সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় বাস করেন। হালে খলিস্তানিদের আন্দোলনের তীব্রতা বেড়েছে। ভারতীয় দূতাবাসে হামলা, জাতীয় পতাকা পোড়ানো, কানাডা প্রবাসী ভারতীয়দের উপর হামলার একাধিক ঘটনা ঘটে।
দিল্লিতে ট্রুডোকে এ নিয়ে কথা শোনান ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তখনই বোঝা গিয়েছিল, জল অনেক দূর গড়াতে পারে। ট্রুডো দেশে ফিরেই ভারত-কানাডা প্রস্তাবিত ট্রেড মিশন বাতিল করে দেন। আগামী মাসে কানাডা সরকারের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে দিল্লিতে এই ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল। দু-দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।