এখনও সমাজের কাছে মেয়েদের পিরিয়ড বা ঋতুচক্র একটি দীর্ঘায়িত সংস্কার। ২০২৩ এ দাঁড়িয়ে মেয়েদের এই রজঃস্বলা হওয়াকে যেন এক লজ্জা জনক বিষয় বলেই মনে করা হয়। দোকানে মেয়েদের স্যানিটরি প্যাড কালো রঙের প্যাকেটে এমন ভাবেই মুড়িয়ে দেওয়া হয়, যেন গোপন কিছু কেনা হচ্ছে। মাসিকের সময়ে নাকি মেয়েরা অশুচি, সেই কারণে মন্দিরে ঢুকতে নেই, ঠাকুরের পুজো করাও নিষিদ্ধ এই সময়ে।
আরও পড়ুন: ৫১ হাজার যুবর হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী
তবে দীর্ঘলালিত সেই সংস্কারের বেড়াজাল বিগত কয়েক বছরে একটু একটু করে যেন আলগা হচ্ছে। পিরিয়ড যে কোনও লজ্জার বিষয় নয়, এই ট্যাবু থেকে যে বেরিয়ে আসার সময় হয়েছে এ নিয়ে গত কয়েক বছরে বিস্তর লেখালিখি হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায়। এবার বাংলা ধারাবাহিকেও এই ট্যাবু ভাঙার কথা শোনা গেল।
স্টার জলসার পর্দায় রাত ১০টায় ‘হরগৌরি পাইস হোটেল'(Harogouri Pice Hotel) ধারাবাহিকে নায়িকা ঐশানি চরিত্রের মুখে শোনা গেল পিরিয়ড (period taboo) নিয়ে চমকপ্রদ সংলাপ।
সেখানে দেখানো হয়, প্রভাকর বলছেন, সংসারে মেয়েদের বাড়তি টাকা দেওয়ার দরকার নেই। খরচ কমানোর দরকার। এই কথার প্রতিবাদ করে ঐশানি বলে ওঠে, ‘মেয়েদের হাতখরচের অবশ্যই দরকার আছে। প্রতি মাসে স্যানিটরি প্যাড কেনার টাকা মেয়েদের নিজেদের কাছে থাকা প্রয়োজন।’
প্রসঙ্গত, ‘হরগৌরি পাইস হোটেল’ ধারাবাহিকে ঐশানির শ্বশুরবাড়ির পরিবারটিকে অত্যন্ত গোঁড়া এবং সেকেলে মানসিকতার দেখানো হয়েছে। ফলে, মেয়েদের হাতখরচ দেওয়ার কারণ হিসেবে ঐশানির মুখে পিরিয়ডের যুক্তি শুনে লজ্জায় যেন হতবাক পরিবারের সকলেই। তবে ঐশানি স্পষ্ট জানায়, যে শারীরবৃত্তিয় কারণের জন্য মেয়েরা মা হতে পারে সেই বিষয় নিয়ে লজ্জা পাওয়ার কোনও জায়গা নেই।’
‘হরগৌরি পাইস হোটেল’ ধারাবাহিকে ঐশানির মুখে এই সংলাপ ইতিমধ্যেই নেটিজেনদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। অনেকেই ঐশানির সুরে সুর মিলিয়ে বলছেন ‘এবার এই বিষয়গুলি নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনার সময় এসেছে।’ পাশাপাশি, কারও বক্তব্য এই প্রথম কোনও ধারাবাহিকে সুস্থ মস্তিষ্কের প্রমাণ পাওয়া গেল। দর্শকদের বক্তব্য, এই ধরনের অচলয়ায়তন ভাঙার মতো দৃশ্য বাংলা ধারাবাহিকে সহজে দেখার সুযোগ মেলে না। সেই হিসেবে অন্যান্য সমসাময়িক ধারাবাহিকের চেয়ে ভাবনাচিন্তায় এগিয়ে গেল ‘হরগৌরি পাইস হোটেল’। প্রসঙ্গত, যীশু নীলাঞ্জনার প্রযোজনা সংস্থার এই ধারাবাহিক প্রথম থেকেই টিআরপি তালিকায় উপরের দিকেই রয়েছে। এক বছর পেরিয়েও ‘হরগৌরি পাইস হোটেল’-এর জয়যাত্রা অটুট রয়েছে।