কলকাতা হাইকোর্ট থেকে কামদুনি মামলায় মৃত্য্যদন্ডের সাজা মকুব করার পর, হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার। প্রধান বিচারপতির এজলাসে দ্রুত শুনানির আর্জি জানায় রাজ্য। আজ সোমবার বিচারপতি বি আর গাভাই, ও পি নরসীমা এবং প্রশান্ত কুমার মিশ্রার বেঞ্চে হয় মামলার শুনানি। কামদুনি মামলায় দোষীদের মকুব করাতে রাজ্য সরকারের বক্তব্য, অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। তবে শীর্ষ আদালতের যুক্তি, কোনও আদালত একবার মুক্তি দেওয়ার পর বিনা শুনানিতে সিদ্ধান্তের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া আইনসম্মত নয়।
আরও পড়ুনঃ ঘোষিত হল পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট, কবে কোথায় ভোট জানুন
আজ সুপ্রিম কোর্টের মামলা চলাকালীন রাজ্য সরকারের পক্ষের আইনজীবী আদালতে সওয়াল করেন, এই ঘটনা কুড়ি বছরের এক কলেজ ছাত্রীর গণধর্ষণের। নিম্ন আদালত তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্ট এই নির্দেশ খারিজ করে দিয়েছে। এই উত্তরে আদালত পাল্টা প্রশ্ন করেন, মামলার দ্রুত শুনানির প্রয়োজনীয়তা কী? উল্লেখ্য, রাজ্যের তরফ থেকে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে এই মামলার দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন করা হয়েছে।
আদালতের দ্রুত শুনানির জবাবে এদিন রাজ্যের পক্ষের আইনজীবী কপিল সিব্বল জানান, আমিন আলি নামে এক ব্যক্তি আজ হাইকোর্টের নির্দেশে ছাড়া পাবে। বাকিদেরও মুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। এদের মুক্তির ফলে রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আমরা এদের মুক্তির উপরে স্থগিতাদেশ চাইছি। অন্তত সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক। হাইকোর্ট গত শুক্রবার নির্দেশ দিয়েছে। আজ সোমবার আমরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি।
শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চের পালটা প্রশ্ন, যখন তদন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে এবং আদালতের নির্দেশে মুক্তি পাচ্ছে আমরা কেন নোটিশ জারি করব? CRPC আইনে (এই আইনে শাস্তির ধারা ঠিক করা হয়ে থাকে। সিআরপিসি-র ৩৯০ ধারা অনুযায়ী কোনও বন্দি ছাড়া পেলে আদালত পদক্ষেপ করতে পারে) এমন কোনও বিধান আছে কি? যেখানে একজন আদালতের নির্দেশে মুক্তির উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে আটকানো যায়? যিনি মুক্তি পাচ্ছেন তাঁর অধিকারের উপরও আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি না।
আইনজীবীর আদালতের উদ্দেশ্যে অনুরোধ, সিআরপিসির ৩৯০ ধারা অনুযায়ী আদালত পদক্ষেপ করতে পারে। মুক্তিপ্রাপ্তের উপরেও স্থগিতাদেশ দেওয়া যায়। আগামিকাল এই কেসের শুনানি হতে পারে। যদি আজ তারা ছাড়া পেয়ে যায়,তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।
এরপর সব পক্ষকে নোটিশ জারি সুপ্রিম কোর্টের। এক সপ্তাহের মধ্যে নোটিসের উত্তর দেওয়ার নির্দেশ। রাজ্য সরকারের আইনজীবীর পাশাপাশি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা সুপারকেও।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে কামদুনির ঘটনায় অভিযুক্তদের ফাঁসির সাজার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। অভিযুক্তদের তরফে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করা হয়। সেখানে দোষী সাব্যস্ত হয় সইফুল আলি এবং আনসার আলি। আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে এক ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আমিন আলিকে বেকসুর খালাস করা হয়। ইমানুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম এবং ভোলানাথ নস্করের সাজা লঘু হয়। তাদের নিম্ন আদালত আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল। যেহেতু তাদের ১০ বছর সাজা হয়ে গিয়েছিল, তাদের সাজা মকুব করে ডিভিশন বেঞ্চ।