কলকাতা – সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি হারানো শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের আন্দোলন আরও তীব্র হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে আচার্য সদনের নিকটে অনশনে বসেছেন চাকরিপ্রার্থীরা, এবং তাদের সঙ্গে সমর্থন জানাতে এসেছেন বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেছেন যে, স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং পর্ষদের উচিত যোগ্য ও অযোগ্য শিক্ষকদের তালিকা আলাদা করে জমা দেওয়া, এবং ঘুষ গ্রহণকারীদের নাম প্রকাশ করা।তিনি আরও বলেন, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, যিনি যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের পক্ষে লড়াই করেছিলেন, তাঁর সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া উচিত।
রূপা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “যোগ্য শিক্ষকরা এই অবিচারের শিকার হয়েছেন। SSC ও পর্ষদকে তাদের দায়িত্ব নিতে হবে এবং যোগ্য ও অযোগ্যদের মধ্যে পার্থক্য করতে হবে। যারা ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাদের নাম জনসমক্ষে আনা উচিত, যাতে সত্য প্রকাশ পায়।” তিনি আরও জানান, “বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য যোগ্য শিক্ষকদের জন্য লড়াই করেছিলেন। তাঁর অভিজ্ঞতা এখন সুপ্রিম কোর্টে এই লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।”
এই বক্তব্যের পটভূমি হলো সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হওয়া। গত কয়েক দিন ধরে চাকরিহারারা SSC দফতরের সামনে প্রতিবাদ, অনশন ও মিছিলের মাধ্যমে তাদের দাবি জানাচ্ছেন। পুলিশের লাঠিচার্জ ও সরকারের নীরবতা নিয়েও তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।
রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের এই পদক্ষেপ বিজেপির পক্ষ থেকে চাকরিপ্রার্থীদের সমর্থন প্রকাশের একটি স্পষ্ট সংকেত। তিনি বলেন, “বিজেপি চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা তাদের দাবির জন্য লড়াই করব, যাতে যোগ্য শিক্ষকরা তাদের অধিকার ফিরে পায়।” এই বক্তব্য রাজ্য সরকারের উপর বিরোধী দলের চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে।তবে, তৃণমূল কংগ্রেস এই সমর্থনকে “রাজনৈতিক নাটক” হিসেবে অভিহিত করেছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “বিজেপি শুধু রাজনীতি করছে। আমরা আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং চাকরিহারাদের সঙ্গে বৈঠক করছি। তাদের সমস্যার সমাধান হবে।” তবে, চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে এই আশ্বাসের প্রতি বিশ্বাসের অভাব রয়েছে।রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য ও সমর্থন রাজ্যের শিক্ষা সেক্টরে চলা সংকটে একটি নতুন রাজনৈতিক মাত্রা যোগ করেছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর যোগ্য ও অযোগ্য শিক্ষকদের আলাদা করার প্রক্রিয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, এই বিষয়ে সরকারের দ্বিধা বা নীরবতা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশ্বাসের গ্যাপ বাড়িয়ে তুলছে। যদি সরকার শীঘ্র কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়, তবে এই সংকট রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
