পুরুলিয়া – ১৮৩৮ সালে মানভূম জেলার সদর দপ্তর মানবাজার থেকে পুরুলিয়ায় স্থানান্তরিত হওয়ার সময় থেকেই জলের সমস্যার সূত্রপাত ঘটে। সে সময়ের ডেপুটি কমিশনার কর্নেল টিকল এই সংকট নিরসনের জন্য কয়েদিদের দিয়ে খনন করান এক বিশাল জলাশয়—যা পরবর্তীতে ‘সাহেব বাঁধ’ নামে পরিচিতি পায়। কিন্তু ব্রিটিশ আমলেও জেলাজুড়ে পানীয় জলের অভাব রয়ে গিয়েছিল, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে।
ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর কংগ্রেস, বামফ্রন্ট এবং বর্তমানে তৃণমূল সরকারের শাসনকালেও চিত্র পাল্টায়নি। বহু উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ আজও কুয়ো, ঝর্ণা বা চুয়া থেকে জল সংগ্রহে বাধ্য হন। যদিও তৃণমূল সরকারের দাবি, চেকড্যাম, পুকুর, সোলার পাম্প ও টিউবওয়েল বসিয়ে সমস্যা সমাধানে প্রচুর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, বাস্তবে তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা।
শহরাঞ্চলেও পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। গ্রীষ্মে শুকিয়ে যায় টিউবওয়েল ও কুয়োর জল। অনেক জায়গায় স্থাপিত সোলার পাম্প বসানোর কিছুদিনের মধ্যেই বিকল হয়ে পড়ে। ফলে একাধিক এলাকায় এখনো জলের ট্যাঙ্ক পাঠিয়ে চাহিদা পূরণ করতে হয়।
বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সংকট নিরসনে একমাত্র ভরসা কেন্দ্রের ‘জলজীবন মিশন’ (রাজ্যে নাম ‘জলস্বপ্ন’)। ২০২০ সালে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল ৫.৪৭ লক্ষ বাড়িতে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া। তবে অভিযোগ উঠেছে, অনেক জায়গায় কল বসানো হলেও জল পড়ছে না।
২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে প্রকল্প সম্পূর্ণ করার পরিকল্পনা থাকলেও কেন্দ্রীয় অনুদান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজ্য সরকার সময়সীমা ২০২৮ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। প্রশাসনের দাবি, কাজ চলছে, তবে বিরোধীদের বক্তব্য, এটি ভোটের আগে জনমতের ‘জলবাহী ভরসা’ ছিল, যা বাস্তবে স্রোতহীন কলের মতোই নিস্তরঙ্গ।
