ইলিশের মরসুমেও কপালে ভাঁজ: চড়া দাম, কম সরবরাহে দিশেহারা বাঙালি

ইলিশের মরসুমেও কপালে ভাঁজ: চড়া দাম, কম সরবরাহে দিশেহারা বাঙালি

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram



দেশ – বর্ষা এসেছে বটে, কিন্তু বাঙালির পাতে ইলিশ উঠছে না বললেই চলে। বাংলাদেশের নদীগুলিতে ইলিশের ঘাটতির প্রভাব পড়েছে দুই বাংলার বাজারেই। ঢাকার বাজারে এক কেজি ইলিশের দাম ২,৬০০ থেকে ২,৮০০ টাকা, আর কলকাতার বাজারে ৬০০ গ্রামের ইলিশ কিনতে কেজিতে গুণতে হচ্ছে প্রায় ২,০০০ টাকা। ভরা মরসুমেও এমন দাম শুনে মধ্যবিত্ত ক্রেতারা কার্যত দিশেহারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাগর ও নদীতে প্রত্যাশা মতো ইলিশ মিলছে না, ফলে সরবরাহ কম এবং দাম চড়া—এই দুয়ের জাঁতাকলেই পড়েছে সাধারণ মানুষ।

এই পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দেশটির প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মহম্মদ ইউনূস ইলিশের দাম বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রককে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এই ঘোষণার পর উল্টে ঢাকার বাজারে অস্থিরতা বেড়েছে। কারণ, ইলিশের দাম নির্ধারণের খবরে চাঁদপুর-সহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা প্রবল আপত্তি জানিয়েছেন।

চাঁদপুরের ইলিশ ব্যবসায়ীরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, তারা ইলিশের দাম বেঁধে দিলে বিক্রি বন্ধ করে দেবেন। তাঁদের বক্তব্য, ইলিশ একটি প্রাকৃতিকভাবে নির্ভরশীল পণ্য, এর জোগান অনিশ্চিত, তাই এর ওপর সরকারি দাম চাপানো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বর্তমানে ঢাকার বাজারে ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম প্রতি কেজিতে ১,২০০ থেকে ১,৪০০ টাকা, আর ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২,২০০ টাকায়—যা অনেক ব্যবসায়ীর মতে ‘ইতিহাসের সর্বোচ্চ’ মূল্য।

এই পরিস্থিতিতে পদ্মার ইলিশের অপেক্ষায় অধীর হয়ে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের ক্রেতারাও। দুর্গাপুজোর আগে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে কিছু পরিমাণ ইলিশ আসে বটে, কিন্তু তখন দেশটিতে ইলিশের প্রাচুর্য না-থাকায় সে রফতানি বিশেষ কাজে আসে না। তাই এ বছর আগেভাগেই পদক্ষেপ নিতে চলেছে ‘ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’। সংগঠনটি বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রককে ইলিশ রফতানির অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি পাঠাবে এবং একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে সরাসরি আলোচনার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

সংগঠনের সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ জানিয়েছেন, এবার আর দুর্গাপুজোর গায়ে গিয়ে নয়, আগেভাগে অনুমতি চাওয়া হচ্ছে যাতে ভালো মানের ও পর্যাপ্ত পরিমাণ ইলিশ আমদানি করা যায়। সভাপতি অতুল দাস জানান, গত বছর ৫,০০০ টন আমদানির অনুরোধ জানানো হলেও অনুমতি মিলেছিল মাত্র ৩,০০০ টনের। তার মধ্যেও শেষ পর্যন্ত এসে পৌঁছেছিল মাত্র ৬০০ থেকে ৮০০ টন ইলিশ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের রফতানি নীতি অনুযায়ী, ইলিশ এখন শর্তসাপেক্ষ রফতানিযোগ্য পণ্যের তালিকায় রয়েছে। সরকারের অনুমতি ছাড়া রফতানির সুযোগ নেই। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে যে টানাপড়েন দেখা দিয়েছে, তাতে এ বছর যথেষ্ট পরিমাণ ইলিশ আমদানির পথ আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। ফলে একদিকে বাংলাদেশে চড়া দাম, অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গেও সরবরাহ অনিশ্চিত—সব মিলিয়ে বাঙালির শ্রাবণ-ভাদ্রের ইলিশ বিলাস যেন এবার অধরাই থেকে যাচ্ছে।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top