বিদেশ – আমেরিকার সঙ্গে একটি অনুকূল বাণিজ্য চুক্তি করতে ব্যর্থ হলে মোদি সরকার বড় ধরনের রপ্তানি ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভিয়েতনামের সঙ্গে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করেছেন, যার ফলে ভিয়েতনামের রপ্তানি শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতের প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের রপ্তানি মার্কিন বাজারে ভিয়েতনামের সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতায় পড়ে ক্ষতির সম্ভাবনায় পড়েছে।
২০২৩ সালে ভারত আমেরিকায় ৭৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল, যার মধ্যে প্রায় ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। বিশেষ করে হিমায়িত চিংড়ি ও প্রন রপ্তানি এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। উক্ত বছরে ভারত এই খাতে ১.৮১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল, যেখানে ভিয়েতনামের রপ্তানি ছিল মাত্র ২৯০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু নতুন চুক্তির ফলে ভারতের রপ্তানি কমে ২২৪ মিলিয়নে নেমে আসতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা শুধুমাত্র এই খাতে প্রায় ১.৬ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি ডেকে আনবে।
এই ছাড়াও রান্নাঘর ও বাথরুমের লিনেন রপ্তানিতে ভারতের ক্ষতি হতে পারে প্রায় ২৮০ মিলিয়ন ডলার এবং গহনার ক্ষেত্রে প্রায় ২৩১ মিলিয়ন ডলার। এই সবক্ষেত্রেই ভারত এবং ভিয়েতনাম একই মার্কিন ক্রেতা গোষ্ঠীর জন্য প্রতিযোগিতা করে, ফলে শুল্ক ছাড় পেলে ভিয়েতনাম সহজেই বাজার দখল করে নিতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ জুলাই ঘোষিত চুক্তির মাধ্যমে ভিয়েতনামকে সেই সুবিধাই দিয়েছেন। এই চুক্তির ফলে ভিয়েতনাম ৪৬ শতাংশ শুল্কের বদলে মাত্র ২০ শতাংশে রপ্তানি করতে পারবে, যেখানে ভারত এখনও ২৬ শতাংশ শুল্কের মুখে রয়েছে। ট্রাম্প নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই চুক্তি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে জানান যে তিনি ভিয়েতনামের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করে “খুব সম্মানিত” বোধ করছেন।
এই পরিস্থিতিতে ভারতের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েছে। যদি খুব দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি প্রাধান্য ভিত্তিক বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন না হয়, তাহলে শুধু চিংড়ি নয়, ভারতের বহু গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতা হারাবে। একদিকে ভিয়েতনাম সুবিধা পাচ্ছে, অন্যদিকে ভারতের রপ্তানিকারীরা শুল্ক ও নীতিগত অসুবিধার মুখে পড়ে বৈদেশিক আয় হারাতে পারেন। তাই সরকারের সামনে এখন একটাই লক্ষ্য—যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্রুত ও ফলপ্রসূ বাণিজ্য আলোচনা সম্পন্ন করা, যাতে এই বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি ঠেকানো যায়।
