বর্ধমান – টানা বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ডিভিসির জল ছাড়ার মাত্রা বাড়ানোয় দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আরামবাগে অবস্থা অত্যন্ত খারাপ, মায়াপুরে আরামবাগ-কলকাতা রাজ্য সড়কের উপর দিয়ে জল বইছে। রূপনারায়ণ, মুণ্ডেশ্বরী এবং দামোদর নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ধান ও সবজি চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবারের ভারী বৃষ্টিতে অধিকাংশ জেলার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। বহু ধানের জমি জলমগ্ন হয়ে রোপা ধানের চারা পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জল নেমে গেলেও বীজের সংকটের কারণে নতুন করে রোপণ করা কঠিন হবে। উঁচু জমির বীজতলাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবজি নষ্ট হওয়ায় বাজারে দাম দ্রুত বাড়ছে।
বৃষ্টিতে বহু মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পূর্ব বর্ধমানে ১৯৬টি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে এবং ৬২৫টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁকুড়ায় ৩০০টি মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৮৪টি পুরোপুরি ভেঙেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর ব্লকে একটি অস্থায়ী সেতু ভেঙে পড়েছে। দাসপুরের তেঁতুলতলায় মাছ ধরতে গিয়ে ১৮ বছরের উত্তম নায়েক তলিয়ে যান, ২৮ ঘণ্টা পর তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জলের অভাবে দেরিতে বীজতলা তৈরি হয়েছিল, যা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামে নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে হয়েছে। গোবিন্দভোগ ধান চাষও পিছিয়ে গেছে জমিতে জল জমে থাকার কারণে। পূর্ব বর্ধমানের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মেহেবুব মণ্ডল জানান, জেলায় প্রায় ৫৮ শতাংশ জমিতে ধান চাষ হয়েছে, তবে গোবিন্দভোগ ধান রোপণ কম হয়েছে। আরামবাগ ও পশ্চিম মেদিনীপুরেও বহু জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৫ আগস্টের মধ্যে ধান রোপণ শেষ করতে পারলে ফলনে বড় ক্ষতি হবে না, তবে এর পর চাষ হলে ফলন কমতে পারে। অন্যদিকে, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বীরভূমের মতো জেলাগুলিতে টানা বৃষ্টি আশীর্বাদ হয়ে এসেছে, কারণ জলের অভাবে অন্য বছর যেসব জমি ফাঁকা পড়ে থাকত, সেখানে এবার ধান চাষ হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, মাইথন জলাধার থেকে ২২ হাজার কিউসেক, পাঞ্চেত থেকে ৩৩ হাজার কিউসেক এবং দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ৬৩ হাজার ৬৫০ কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়েছে। ডিভিসির জল ছাড়ার ফলে পূর্ব বর্ধমান ও হুগলির ধান চাষের বড় ক্ষতি হয়েছে। রায়না, খণ্ডঘোষ ও জামালপুর ব্লকের বহু জমি জলের তলায় চলে গেছে।
