আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারছাত্রী হত্যা: এক বছর পরও মলম পুরেনি রহস্য

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারছাত্রী হত্যা: এক বছর পরও মলম পুরেনি রহস্য

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram



কলকাতা – গতবছর ৮ অগাস্ট কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ‘চেস্ট ডিপার্টমেন্ট’-এর সেমিনার হলে ৩১ বছরের এক ডাক্তারি ছাত্রীকে টানা ৩৬ ঘণ্টার ডিউটির পর গভীর রাতে বিশ্রামে যাওয়ার ঠিক পরের দিন, ৯ অগাস্ট সকালে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তে জানা যায়, তরুণীকে যৌন নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

প্রথমে কলকাতা পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করলেও পরে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে একমাত্র অভিযুক্ত করে গ্রেফতার করে। কিন্তু মৃতার পরিবার ও সহকর্মীরা দাবি করেন, এটি কোনো একক ঘটনার ফল নয়, পরিকল্পিত অপরাধ এবং আরো অনেকে জড়িত, যারা হাসপাতালের ভেতরের লোক বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

ঘটনার পর দেশজুড়ে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে, জুনিয়র চিকিৎসকেরা কর্মবিরতিতে যান। তদন্তের ভার নেওয়া হয় সিবিআই’র হাতে। সিবিআই এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র সঞ্জয়কেই অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং অন্য কাউকে গ্রেফতার করেনি। ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি শিয়ালদহ আদালত সঞ্জয়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। তবে এখনও বিতর্ক থামেনি।

নির্যাতিতার পরিবার এবং সিবিআই একই সঙ্গে সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবি করেন এবং বাকি অপরাধীদেরও শনাক্ত করার অনুরোধ করেন। অপরদিকে সঞ্জয় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে কলকাতা হাইকোর্টে খালাসের আবেদন করেছেন।

ঘটনার দিন হাসপাতালের পক্ষ থেকে পরিবারের কাছে তিনবার ফোনে বিভিন্ন কথা বলা হয়, যেখানে ‘আত্মহত্যা’ সম্পর্কিত প্রসঙ্গও উঠে আসে। পরিবারকে প্রথমে দেহ দেখাতে না দিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করানো, ময়নাতদন্ত ছাড়াই দেহ দ্রুত রিলিজ করে দ্রুত সৎকার করানোর মতো ঘটনাগুলোও হাসপাতাল ও পুলিশের অতি সক্রিয়তার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

নির্যাতিতার পরিবার দাবি করেন, সিবিআই কলকাতা পুলিশের মতোই আসল অপরাধীদের আড়াল করছে। তাঁদের মতে, “এত বড় মেডিক্যাল কলেজে একজন লোক ঢুকে ধর্ষণ করে খুন করল, কেউ কিছু জানল না?”

এক বছরের ব্যবধানে জনমনে হাজারও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—ঘটনার দিন আসলে কী ঘটেছিল? আসল সত্য কী?

শীর্ষ আদালতে কলকাতা পুলিশ জানিয়েছিল, ৯ অগাস্ট সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে কী করেছিল পুলিশ—তবে ১৪ ঘণ্টার বিলম্বে FIR দায়ের করা এবং ময়নাতদন্তের আগেই অস্বাভাবিক মৃত্যুর অনুমান সম্পর্কে আদালত গম্ভীর প্রশ্ন তুলেছিল।

এই মামলার তদন্তে উঠে এসেছে দুর্নীতি ও তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ। এর ভিত্তিতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের তৎকালীন প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার অফিসার ইনচার্জ অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ, সময়মতো চার্জশিট দাখিল না করায় অভিজিৎবাবু জামিনে মুক্ত হয়েছেন।

এক বছর পেরিয়ে গেলেও রাতের সত্য সামনে আসেনি। একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হবে কি? প্রমাণ নষ্টের দায়ে দোষীদের শাস্তি হবে তো?

এই আবহে ৮ অগাস্ট অভয়া মঞ্চ ও জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট শ্যামবাজারে মশাল মিছিল, ধিক্কার সভা ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে। তাঁদের স্লোগান, “বিচার ধামাচাপা দেওয়া হবে না।”

বিচারহীনতার প্রতিবাদে ৯ অগাস্ট নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে নাগরিক সমাজ। এতে উপস্থিত থাকবেন নির্যাতিতার মা-বাবাও। শ্যামবাজারের বিক্ষোভে কান্নায় ভেঙে পড়া মা-বাবা জানিয়েছেন, “আজও প্রতি রাতে মেয়ের কান্না শুনি, যতদূর লড়তে হয় লড়ব, বিচার চাই।”

এক বছর পেরিয়ে গেলেও এই কলঙ্কিত ঘটনাটি এখনও সামাজিক এবং বিচারিক বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে, এবং আরও স্বচ্ছ ও নিখুঁত তদন্তের দাবি উঠেই চলছে।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top