ক্ষতিকর অনলাইন গেম নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রের বড় পদক্ষেপ, সংসদে আসছে বিশেষ বিল

ক্ষতিকর অনলাইন গেম নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রের বড় পদক্ষেপ, সংসদে আসছে বিশেষ বিল

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

দেশ – ভারতে অনলাইন গেমের জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে, বিশেষ করে কিশোর-যুব সমাজের মধ্যে। মোবাইল ফোনে গেম খেলার নেশা এখন এক নতুন সামাজিক বাস্তবতা হয়ে উঠেছে। বিনোদনের বড় মাধ্যম হলেও, এর নেতিবাচক প্রভাব দিন দিন ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে। অনলাইন গেমের আসক্তির ফলে শিক্ষাজীবনে ক্ষতি, মানসিক চাপ, পারিবারিক অশান্তি এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও বাড়ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার লোকসভায় একটি বিশেষ বিল পেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যেখানে কিছু ক্ষতিকর অনলাইন গেম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব রয়েছে।

কেন্দ্রের দাবি, অনেক অনলাইন গেম কেবল বিনোদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানুষের মানসিক ও সামাজিক ক্ষতি করছে। বিশেষত অল্পবয়সীরা যখন এই গেমের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে, তখন পড়াশোনা, স্বাস্থ্য ও মানসিক ভারসাম্য মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। বেশ কিছু গেমে আবার লুকিয়ে রয়েছে জুয়ার প্রবণতা, যেখানে অর্থ বিনিয়োগ করে খেলতে হয়। এর ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি ও মানসিক চাপ—দুটোরই শিকার হচ্ছেন বহু মানুষ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অনলাইন গেমের আসক্তি বর্তমানে এক ধরনের “ডিজিটাল ড্রাগ”-এ পরিণত হয়েছে। এর ফলে রাত জেগে খেলা, ঘুমের সমস্যা, মনোযোগের ঘাটতি, খিটখিটে মেজাজ এবং হিংসাত্মক মনোভাবের মতো সমস্যাগুলি কিশোরদের মধ্যে দ্রুত বাড়ছে। তাই বিষয়টি আর হালকাভাবে নেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করছে সরকার।

প্রস্তাবিত বিলে মূলত দুটি দিককে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে — ক্ষতিকর ও আসক্তি-সৃষ্টিকারী অনলাইন গেম নিষিদ্ধ করা এবং অনলাইন গেমিং শিল্পকে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার আওতায় আনা। সরকারের বক্তব্য, ভারতে গেমিং ইন্ডাস্ট্রি দ্রুত বাড়ছে এবং এটিকে পুরোপুরি আটকানো উচিত নয়, কারণ এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তবে যেসব গেম সমাজে ক্ষতি ডেকে আনছে, সেগুলোকে আইনত বন্ধ করাই হবে বিলের প্রধান লক্ষ্য।

যে সব গেমে অর্থ বিনিয়োগ করে খেলার সুযোগ রয়েছে, কিশোরদের মধ্যে হিংসা বা আত্মঘাতী প্রবণতা বাড়াচ্ছে, শিশুদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের ঝুঁকি রয়েছে বা অতিরিক্ত আসক্তি তৈরি করছে, সেসব গেমকে “বিপজ্জনক” হিসেবে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ করা হবে। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু, কেরল ও কর্নাটক অনলাইন গেম নিষিদ্ধের চেষ্টা করলেও সেখানে আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছিল। তাই এবার মোদী সরকার সর্বভারতীয় পর্যায়ে একটি সুসংহত আইন আনতে চলেছে।

বিল সংসদে পাশ হলে দেশের গেমিং কোম্পানিগুলিকে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে কাজ করতে হবে। শিশু ও কিশোরদের জন্য গেম তৈরি করতে চাইলে ডেভেলপারদের বিশেষ অনুমতি নিতে হবে। অন্যদিকে, নিষিদ্ধ গেম চালালে কঠোর শাস্তি ও জরিমানার বিধানও থাকবে। সরকার একটি গেমিং রেগুলেটরি অথরিটি গঠন করবে, যারা অনলাইন গেমের উপর সরাসরি নজরদারি চালাবে এবং কোন গেম বাজারে অনুমোদিত হবে, তা ঠিক করবে।

বিল কার্যকর হলে ক্ষতিকর গেম থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং শিশু-কিশোরদের পড়াশোনা ও স্বাভাবিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। বাবা-মায়ের মধ্যেও স্বস্তি ফিরবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু নিষিদ্ধ করলেই সমস্যার সমাধান হবে না; সচেতনতা বাড়ানোও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই সরকারের পাশাপাশি স্কুল, কলেজ ও পরিবারের সক্রিয় ভূমিকা নেওয়াও জরুরি।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top