বিহার – আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে বড় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, নির্বিচারে লক্ষাধিক নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, ফলে বহু মানুষ তাদের ভোটাধিকার হারানোর আশঙ্কায় পড়েছেন। পুরনিয়ার বাসিন্দা ঝুরনা দাস, যিনি চার দশক আগে পূর্ব বর্ধমান থেকে বিহারে এসেছিলেন, খসড়া তালিকায় নিজের নাম খুঁজে পাননি। শেষবার তিনি ভোট দিলেও ভোটার আইডি দিয়ে সার্চ করেও কোনো তথ্য মিলছে না। স্থানীয় বুথ-লেভেল অফিসার (বিএলও) জানিয়েছেন, মৃত বাবা-মায়ের নথি ছাড়া নাম ফেরানো সম্ভব নয়, যদিও নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, ১৯৮৭ সালের আগে জন্মগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে এমন শর্ত নেই।
বিশেষ সংশোধনী প্রক্রিয়ায় প্রকাশিত খসড়া তালিকা থেকে প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৬ জেলার ৫৮টি আসনের প্রায় ২০০ বুথে গড়ে এক-তৃতীয়াংশ ভোটারের নাম মুছে ফেলা হয়েছে। কোথাও কোথাও অর্ধেক নামও নেই। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বুথে দুই শতাংশের বেশি নাম বাদ পড়লে অতিরিক্ত যাচাইয়ের কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। পুরনিয়ার নির্বাচনী রেজিস্ট্রেশন অফিসার পার্থ গুপ্ত স্বীকার করেছেন, বিএলও-দের কোনো লিখিত নির্দেশিকা দেওয়া হয়নি। কেবল মৌখিকভাবে জানানো হয়েছিল যে, মৃত্যুর সনদ না থাকলে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। ফলে অনেকেই প্রতিবেশীর মতামত বা পরিবারের সদস্যদের কথায় ভিত্তি করে নাম বাদ দিয়েছেন।
মাঠপর্যায়ের চিত্র আরও উদ্বেগজনক। যাদের নাম বাদ পড়েছে, তাদের অধিকাংশই দীর্ঘদিন ধরে একই ঠিকানায় বসবাস করছেন। অনেককে ‘absent’ বা ‘shifted’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, অথচ ভোটাররা দাবি করেছেন, বিএলও কখনও তাদের বাড়িতে যাননি। পাটনার গৃহকর্মী জুমাইরা খাতুনের ছেলে লালন প্রতি বছর মুম্বাই থেকে ফিরে ভোট দেন, তবুও এবার তাকে ‘absent’ বলে বাদ দেওয়া হয়েছে। উপেন্দ্র পণ্ডিত এবং তাঁর স্ত্রী প্রেম শীলা দেবীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।
১৭ জন বিএলও জানিয়েছেন, মৌখিক নির্দেশনার কারণে তাদের কাজ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ধারণানির্ভর হয়েছে। অ্যাপে তথ্য আপলোড করার সময় যাদের যথেষ্ট নথি ছিল না, তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। নথির অভাব, দারিদ্র্য ও অশিক্ষার কারণে হাজার হাজার মানুষ এই প্রক্রিয়ার শিকার। যদিও দাবি-আপত্তির সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে, তবে গরিব ও প্রান্তিক মানুষের পক্ষে জটিল প্রক্রিয়া সামলানো কঠিন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই নির্বাচনে লক্ষ লক্ষ মানুষ ভোটাধিকার হারাতে পারেন।
